শ্যামল বিশ্বাস,বিশেষ প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের গুনাকরকাটি ব্রিজের নিচে বেতনা নদীর চরে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুড়ে ফেলে দেওয়া নব জাতকের পরিচয় পাওয়া গেছে।
চরম ধিক্কার জনক এ ঘটনার সাথে জড়িত নবজাতকের মাতৃকূল, পিতৃকূল ও ক্লিনিকের সদস্যরা থাকতে পারে বলে তথ্যানুসন্ধানে একাধিক সূত্র জানিয়েছেন। জানাগেছে,ঐ নবজাতক শিশুটি ফকরাবাদ গ্রামের কার্ত্তিক মন্ডলের পুত্র মিলন মন্ডল এর স্ত্রী দিপিকার গর্ভেওরসন্তান।
দিপিকার পিতার নাম সন্দীপ সরকার, মাতা উর্মি রানী সরকার। তারা পিরোজপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত সোমবার উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ফকরাবাদ গ্রামের মিলনময় মন্ডলের স্ত্রী দিপিকা মন্ডলের সিজার অপারেশ করাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বুধহাটা বাজারের বহুল আলোচিত জনসেবা ক্লিনিকে। আগেই পরীক্ষায় তার বিকলঙ্গ কন্যা পেটে আছে বলে দিপিকা ছাড়া অনেকেই জানতো।
সেখানে অপারেশনের পর বিকলঙ্গ সন্তানকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে শিশুর মা অজ্ঞান থাকার সুযোগে মায়ের কোল থেকে শিশুটিকে নিয়ে গুনাকরকাটি ব্রীজের উপর থেকে ছুড়ে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পরদিন সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে রক্তাক্ত মৃতপ্রায় শিশুটি উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ ঘন্টা পর শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সাংবাদিকরা সেই থেকে শিশু হত্যার সাথে জড়িতদের সন্ধানে মাঠে নামেন।
এবং দীর্ঘ দেড় দিন অনুসন্ধানের পর শিশুটির মা’কে জননেবা ক্লিনিকে অবস্থানের সন্ধান পান। শিশুর মা দিপিকা বলেন, তিনি অজ্ঞান ছিলেন। তার সন্তান অসুস্থ তাই সাতক্ষীরা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরা তাকে জানিয়েছে। তার সন্তানকে মারা হয়েছে এ তথ্য তিনি জানেননা। তবে একাধিক সূত্র ধারনা করছেন, দিপিকার মা উর্মি রানী, তার বাবা সন্দীপ সরকারসহ পরিবারের সদস্যরা ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের জোগসাজগে শিশুটিকে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
জনসেবা ক্লিনিকের নার্স নার্গিস বলেন, সিজারের পর সেখানে পুরুষ লোক না থাকায় মহিলারা সাতক্ষীরা নিতে পারেনি। সকালে নিয়ে যাবে বলেছিল। সকালে তিনি ক্লিনিকে গিয়ে দেখেন শিশুটি নেই। তবে কোন পুরুষ ছাড়া কিভাবে রাতেই ঐ বাচ্চা বাহিরে নিয়ে যাওয়া হলো তার কোন উত্তর মেলেনি। ক্লিনিকের মালিক ডাঃ শাহিনুর জানান, তিনি ৭/৮ দিন অসুস্থ।
নার্স রোগিকে ভর্তি নেয়। জনৈক গ্রাম্য ডাঃ কৃষ্ণ’র পাঠানো রোগি ছিল সে। আল্ট্রাসনো রিপোর্টে বাচ্চা বিকলঙ্গ বলে জানাছিল। জেনে বুঝেই সিজার করা হয়। বাচ্চা অসুস্থ থাকায় সাতক্ষীরা হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু হাসপাতালে না নিয়ে মেরে ফেলানোর ঘটনা তার জানানেই। বাচ্চা কোথায় ও কেমন আছে সে খবর কেন নেননি।
একই সময় একটি বাচ্চা নদীর চরে ফেলানোর ঘটনা জানার পরও কেন খোঁজ নেননি, পুলিশকে রিপোর্ট কেন করেননি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, জনসেবা ক্লিনিকে বাচ্চা নষ্ট করা ও বিভিন্ন সময়ে রুগীর মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। তারপরও বিভিন্নভাবে পার পেয়ে গিয়ে পূনরায় তারা এসব কাজ করে থাকে।
চরম অমানবিক ও ধিক্কার জনক ঘটনার বিষয়টি তদন্ত পূর্বক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য এলাকার সচেতন মহল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন। এদিকে, এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান বাদী হয়ে আশাশুনি থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানাগেছে।