এম এম নুর আলম,আশাশুনি প্রতিনিধি: আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের গুনাকরকাটি ব্রিজের নিচে বেতনা নদীর চরে হত্যার উদ্দেশ্যে জীবিত নবজাতককে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার পর শিশুটি মারা যাওয়ার ঘটনায় আশাশুনি থানায় হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান বাদী হয়ে এজাহার দিলে বৃহস্পতিবার এ হত্যা মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এদিকে, চরম ধিক্কার জনক এ ঘটনার সাথে জড়িত নবজাতকের মাতৃকূল, পিতৃকূল ও ক্লিনিকের সদস্যরা আছে এমন মন্তব্য করে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এ ঘটনায় আশাশুনির সর্বসাধারন নবজাতকের মাতৃকূল, পিতৃকূল ও ক্লিনিকের মালিক শাহিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবী জানিয়েছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, শাহিনের জনসেবা ক্লিনিকে গত ১ বছরে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসায় অবহেলা করার দরুন আশাশুনি উপজেলার পদ্ম-বেউলা এলাকার মা ও নবজাতকের মৃত, শ্বেতপুর এলাকার ১ রোগীর মৃত্যুসহ অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারী প্যাথলজী রিপোর্ট করার টেকনিশিয়ান না থাকা, আল্ট্রাসনো স্পেশালিষ্ট না থাকা, এমবিবিএস চিকিৎসক না থাকা ও ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন করা না থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট শাম্মি আক্তার কয়েকটি সেকশন সিলগালা করেন।
তার ক্লিনিকে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে এ পর্যন্ত শতাধিক রোগীর মৃত্যু ও বহু রোগী ও রোগীর পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এসব ঘটনা ঘটলেও অজ্ঞাত কারণে সে বার বার ছাড় পেয়ে যায়। ক্লিনিকের মালিক শাহিন এমবিবিএস পাশ না করেও ডাক্তার হিসাবে রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। এছাড়াও এখানে মাঝে মাঝে ভূয়া সার্জন দিয়ে অপরাশেন করা হয়ে থাকে। শাহিন নিজেই মাঝে মধ্যে অপারেশন করে থাকেন বলে একাধিক তথ্য পাওয়া যায়। তিনি এসব অবৈধ কর্মকান্ড করে বাহিরের জেলা থেকে এসে বুধহাটায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
নবজাতক হত্যার পর এসব ঘটনা সামনে এনে ক্লিনিক সিলগালা ও তার শাস্তির জোর দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা। জানাগেছে, হত্যা করা শিশুটি ফকরাবাদ গ্রামের কার্ত্তিক মন্ডলের পুত্র মিলন মন্ডল এর স্ত্রী দিপিকার গর্ভের সন্তান। দিপিকার পিতার নাম সন্দীপ সরকার, মাতা উর্মি রানী সরকার। তারা পিরোজপুর গ্রামের বাসিন্দা। গত সোমবার উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ফকরাবাদ গ্রামের মিলনময় মন্ডলের স্ত্রী দিপিকা মন্ডলের সিজার অপারেশ করাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বুধহাটা বাজারের বহুল আলোচিত জনসেবা ক্লিনিকে। আগেই পরীক্ষায় তার বিকলঙ্গ কন্যা পেটে আছে বলে দিপিকা ছাড়া অনেকেই জানতো।
সেখানে অপারেশনের পর বিকলঙ্গ সন্তানকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে শিশুর মা অজ্ঞান থাকার সুযোগে মায়ের কোল থেকে শিশুটিকে নিয়ে গুনাকরকাটি ব্রীজের উপর থেকে ছুড়ে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। পরদিন সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে রক্তাক্ত মৃতপ্রায় শিশুটি উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ ঘন্টা পর শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শিশুর মা দিপিকা বলেন, তিনি অজ্ঞান ছিলেন। তার সন্তান অসুস্থ তাই সাতক্ষীরা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরা তাকে জানিয়েছে।
তার সন্তানকে মারা হয়েছে এ তথ্য তিনি জানেননা। তবে একাধিক সূত্র ধারনা করছেন, দিপিকার মা উর্মি রানী, তার বাবা সন্দীপ সরকারসহ পরিবারের সদস্যরা ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের জোগসাজগে শিশুটিকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। জনসেবা ক্লিনিকের নার্স নার্গিস বলেন, সিজারের পর সেখানে পুরুষ লোক না থাকায় মহিলারা সাতক্ষীরা নিতে পারেনি। সকালে নিয়ে যাবে বলেছিল। সকালে তিনি ক্লিনিকে গিয়ে দেখেন শিশুটি নেই।
তবে কোন পুরুষ ছাড়া কিভাবে রাতেই ঐ বাচ্চা বাহিরে নিয়ে যাওয়া হলো? বন্ধ গেট কে খুলে দিলো? গর্ভের ফুল ও অন্যন্য আবর্জনা কিভাবে বেতনা নদীর চরে পাওয়া গেল? তার কোন উত্তর মেলেনি। ক্লিনিকের মালিক ডাঃ শাহিনুর জানান, নার্স রোগিকে ভর্তি নেয়। জনৈক গ্রাম্য ডাঃ কৃষ্ণ’র পাঠানো রোগি ছিল সে। আল্ট্রাসনো রিপোর্টে বাচ্চা বিকলঙ্গ বলে জানাছিল। জেনে বুঝেই সিজার করা হয়। বাচ্চা অসুস্থ থাকায় সাতক্ষীরা হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু হাসপাতালে না নিয়ে মেরে ফেলানোর ঘটনা তার জানানেই। বাচ্চা কোথায় ও কেমন আছে সে খবর কেন নেননি।
একই সময় একটি বাচ্চা নদীর চরে ফেলানোর ঘটনা জানার পরও কেন খোঁজ নেননি, পুলিশকে রিপোর্ট কেন করেননি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, জনসেবা ক্লিনিকে বাচ্চা নষ্ট করা ও বিভিন্ন সময়ে রুগীর মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। তারপরও বিভিন্নভাবে পার পেয়ে গিয়ে পূনরায় তারা এসব কাজ করে থাকে। কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত আল হারুন চৌধুরী জানান, এ ঘটনায় আমি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছি। ঘটনার সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখার অপেক্ষায় আছি।
থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ গোলাম কবির জানান, এবিষয়ে কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান বাদী হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। শিশুটির ডিএনএ নমুনা রাখা হয়েছে। অচিরেই আসামীরা ধরা পড়বে। চরম অমানবিক ও ধিক্কার জনক ঘটনার বিষয়টি তদন্ত পূর্বক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য এলাকার সচেতন মহল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন।