রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাীর বাঘায় এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বাড়ির প্রবেশদ্বারে ইটের প্রাাচীর দিয়ে বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক প্রভাবশালীর প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি ভুক্তভোগী ওই পরিবার। ফলে চরম ভোগান্তির মধ্যে জীবন যাপন করছেন ওই পরিবারের সদস্যরা।
জানা গেছে,বাঘা উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে দক্ষিন মিলিক বাঘা গ্রামে দির্ঘ প্রায় ২৫বছর আগে ৫ শতক জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মান করেন মৃত: আশরাফ আলীর (বীর মুক্তিযোদ্ধা) বর্তমানে তার মেয়ে নাসিমা আক্তার অসুস্থ মা ও স্বামি সন্তান নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করেন। এমতাবস্থায় গত ডিসেম্বর (২০২০) মাসে তার বাড়ী থেকে পশ্চিম দিকে পাকা রাস্তায় আসার একমাত্র পথটি পাশের জমির মালিক সাজদার রহমান ইটের প্রাাচীর দিয়ে বন্ধ করে দেন। এ ঘটনায় বাঘা পৌর মেয়র বরাবর অভিযোগ করলে পৌর মেয়র আব্দুর রাজ্জাক সাজদার রহমানকে প্রাচীর ভাঙ্গার জন্য নোটিশ দেন। কিন্তু নয় মাস পেরিয়ে গেলেও প্রাচীর অপসারন করেননি অভিযুক্ত ব্যক্তি। এ ঘটনাকে চরম অমানবিক বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,নাসিমার বাড়ি থেকে সরকারি পাকা সড়কে আসার কাঁচা রাস্তায় ৩ ফিট উচ্চতায় বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
ভুক্তভুগি নাসিমা জানান,২০/২৫ বছর থেকে এই দিক দিয়ে আমরা স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করে প্রতিবেশী প্রভাবশালী সাজদার রহমান ইটের প্রাচীর নির্মান করে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেন। এখন আমরা অনেক কষ্টে বাড়ি থেকে চলাচল করি । এভাবে চলাচল করতে গিয়ে আমার অসুস্থ মা (৮৫) কয়েকবার দুর্ঘটনার শিকারও হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে এ প্রতিবেদকে বলেন,আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তার পরেও বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে ঘুরে কোন প্রতিকার পায়নি।
নাসিমার স্বামী শিক্ষক জাহাঙ্গির আলম জানান, নির্মাণাধীন প্রাচীরের পিছনের দিকে সরকারী ভাবে চলাচলের রাস্তা আছে। প্রতিবেশী সাজদার রহমান তার লোকবল নিয়ে রাতারাতি বাড়ির সামনে ইটের প্রাচীর তুলে তাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেন। অথচ ওই জায়গা দিয়ে গত পঁচিশ বৎসর যাবৎ আমরা চলাচল করে আসছি।
তিনি আরও জানান,বিষয়টি নিয়ে পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ,থানা ও ইউএনও’র বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কারও কথাকেই তিনি কর্নপাত করেনি।
এ বিষয়ে বাঘা পৌর মেয়র আব্দুর রাজ্জাক তাকে লিখিত ভাবে প্রাচীর অপসারনের জন্য নির্দেশ দিলেও দীর্ঘ নয় মাস ধরে নতুন-নতুন তারিখ দিয়ে বিচারের নামে কাল ক্ষেপণ করছেন। এ বিষয়ে থানাকে অবগত করলে পুলিশ প্রাচীর বৃদ্ধি বন্ধ করে দেন এবং মানবিক কারনে রাস্তা দেবার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু পুলিশের নিষধাঞ্জা উপেক্ষা করে তিনি আবারও প্রাচীর বৃদ্ধির চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রাচীর নির্মানকারি সাজদার রহমান বলেন,আমার জায়গায় আমি প্রাচীর দিয়েছি। কাউকে রাস্তার জন্য ব্যবহার করতে দিবো বলে আমি জমি ক্রয় করিনি ।
এ বিষয়ে বাঘা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েজুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছে। আর সেই স্বাধিন দেশে যদি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের চলাচলের রাস্তার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়,এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি অচিরেই এই অসহায় দম্পত্তির চলাচলের রাস্তা বের করে দেয়ার জন্য পৌর মেয়রসহ প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।
বাঘা থানা অফিসার ( ওসি) তদন্ত রফিকুল ইসলাম জানান,কারও বাড়ির সামনে প্রাচীর নির্মাণ করে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করার বিষয়টি অমানবিক। অভিযোগ পেলে প্রাচীর নির্মাণ কারীকে বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখে সমঝোতা করে রাস্তা দেবার জন্য বলা হবে
বাঘা পৌর মেয়র আব্দুর রাজ্জাক বলেন,প্রাচীর অপসারনের জন্য প্রাচীর নির্মানকারিকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি প্রাচীর অপসারন করেন নি। এ বিষয়ে শিঘ্রই ম্যাজিষ্ট্রেটের স্বরনাপর্ণ হয়ে পরবর্তী ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা বলেন,বিষয়টি লোক মুখে শুনেছি অভিযোগ পেলে সরেজমিন পরিদর্শন সাপেক্ষে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।