রাজশাহী ব্যুরো: নাটোরের লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের পানসীপাড়ায় শ্রী শ্রী ফকির চাঁদ গোসাঁইজীর আশ্রমে ৩২৬ তম নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। দুই দিন ব্যাপী এ অনুষ্ঠানে ভক্তবৃন্দের মিলন মেলা শেষ হলো সোমবার।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রবিবার(৫ ও ৬ ডিসেম্বর)২ দিন ব্যাপী নবান্ন উৎসবে এবারও ২ দিন আগে থেকেই গোসাইজীর ভক্তরা লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের পানসীপাড়া রামকৃষ্ণপুর গ্রামে অবস্থিত গোসাইজীর আশ্রমে আসতে শুরু করে।
রবিবার দুপুরে আশ্রম কমিটির সভাপতি শ্রী সঞ্জয় কুমারের সভাপত্বিতে ভক্তবৃন্দের সভা অনুষ্ঠিত হয়।এতে উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু, লালপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ইসহাক আলী,লেঃ কর্ণেল রমজান আলী সরকার(অবঃ)প্রমুখ।
আশ্রম এলাকা ঘুরে ভক্ত ও সেবাইতদের সাথে কথা বলে জানা যায়,এবার বিশ্ব ব্যাপী প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে প্রথম দিন রবিবার সকাল থেকেই আশ্রমে ভক্তদের ভীড় একটু কম।
তবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভক্তরা আশ্রমে পৌঁছেই শ্রী শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোসাইজী ও তার শিষ্য সাধু বৃন্দের সমাধীতে ভক্তি শ্রদ্ধা জানান। ভক্তরা আশ্রমের উন্নয়নে সাধ্যমত দানও করছেন।
অপর দিকে নি:সন্তান বন্ধ্যা মহিলারা আশ্রমের পুকুরে গোসল করে অক্ষয় তলা নামক স্থানে বটগাছের নিচে ভেজা কাপড়ে বসে আঁচল বিছিয়ে সন্তান লাভের জন্য মান্নত করছেন। কথিত আছে যদি গাছের ফল বা পাতা আঁচলের ওপর পড়ে তাহলে নি:সন্তান নারী সন্তান লাভ করবে।
প্রথম দিন আশ্রম প্রাঙ্গনে দুপুরে সারিবদ্ধভাবে বসে গোসাইজীর ভক্তরা কলার পাতায় করে খিচুড়ি,পাঁচ তরকারী ও পায়েস ভক্ষণ করতে দেখা গেছে।আশ্রমের প্রধান সেবাইত শ্রী পরমানান্দ সাধু জানিয়েছেন,বাংলা ১২১৭ সালে লালপুর উপজেলা সদর থেকে আট কিলো মিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দুড়দুড়িয়ার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের গহীন অরণ্যে একটি বটগাছের নিচে আস্তানা স্থাপন করেন ফকির চাঁদ বৈষ্ণব। এখানেই সাধু ধ্যান-তপস্যা ও বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার আরম্ভ করেন।
প্রতি বছর দোল পূর্ণিমা, গঙ্গা স্নান ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত সাধক সমবেত হন। সাধু ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের মৃত্যুর পর নওপাড়ার জমিদার তারকেস্বর বাবু তাঁর (সাধুর) স্মরণে সমাধিটি পাকা করে দেন। এ ছাড়াও ভক্তদের সুবিধার্থে ৬৮ বিঘা জমি ও সান বাঁধানো বিশাল দুটি পুকুর দান করেন। আশ্রম চত্ত্বরে দালান কোঠা নির্মানেও তিনি সহযোগিতা করেন।
আশ্রমের প্রবেশ পথে রয়েছে লতা-পাতা কারুকার্য খচিত সুবিশাল ফটক। প্রধান দ্বার প্রান্তে ডান পাশে রয়েছে ভক্ত সাধু ও সাধু মাতাদের আবাসন। বাম পাশে রয়েছে ৬ জন সাধুর সমাধি মন্দির।
একটু সামনেই রয়েছে শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের চার কোনা প্রধান সমাধি স্তম্ভ। বর্গাকৃতির ৪০ ফুট সমাধি সৌধের রয়েছে আরেকটি ৩০ ফুট গৃহ। এর একটি দরজা ছাড়া কোন জানালা পর্যন্ত নেই।
মূল মন্দিরে শুধুমাত্র প্রধান সেবাইত প্রবেশ করেন। কাথিত আছে, মন্দিরের মধ্যে সাধু ফকির চাঁদ স্বশরীরে প্রবেশ করে ঐশ্বরিকভাবে স্বর্গ লাভ করেন। তাঁর শবদেহ দেখা যায় নি। পরিধেয় বস্ত্রাদি সংরক্ষণ করে সমাধি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।
গম্বুজ আকৃতির সমাধির উপরিভাগ গ্রিল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। ঘরের দেয়াল ও দরজায় বিভিন্ন প্রাণি, গাছ, লতা-পাতা খচিত কারুকার্য শোভা পাচ্ছে। সমাধির মাত্র পাঁচ গজ দূরে রয়েছে বিশাল আকৃতির এক কুয়ার একটি সিঁড়ি পথ রয়েছে পাশের রান্না ঘরের সাথে সংযুক্ত। এই সিঁড়ি পথে সাধুগণ স্নানে যেতেন এবং রান্নাসহ পানিয় জল সংগ্রহ করতেন। বর্তমানে কুয়ার পানি ব্যবহার অযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। আশ্রম চত্ত্বরে রয়েছে ১৪১ জন ভক্ত সাধুর সমাধি।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের পানসিপাড়া- রামকৃষ্ণপুর গ্রামে বাংলা (৩২৬ বছর পূর্বে) শ্রী শ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোসাইজীর আশ্রম স্থাপিত হয়।
আশ্রমটি ৩২ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দুই দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার ভক্ত বৃন্দের আগমন ঘটে। দুই শতাব্দির স্মৃতিবাহী ফকির চাঁদ গোসাই আশ্রম দেশ-বিদেশ থেকে আসা দর্শনার্থীদের কোলাহলে মুখরিত আশ্রমটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।