রাজশাহী প্রতিনিধি: মাদক, জঙ্গী, সন্ত্রাস ও ইভটিজিংকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন চারঘাট মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। চারঘাট থানাধীন এলাকায় যেখানে মাদকের স্বর্গরাজ্য বলে সবাই জানতো। ওসি মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চারঘাট মডেল থানায় যোগদানের পর মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিলে মাদক কারবারিরা অনেকেই মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। ফলে চারঘাট থানা এলাকায় অনেকটাই মাদকের আনাগোনা কমে গেছে। ওসি থানার সকল পুলিশ সদস্যকে কড়া নির্দেশনা দিয়ে বলেন, মাদক বিক্রি বা সেবন যারাই করেন তাদের কোনো ছাড় নয়। ওসি আরো বলেন, আমি থাকলে মাদক থাকবে না, আর মাদক থাকলে আমি থাকব না। ওসি হিসেবে যোগদানের পর সঠিক নিয়মের মধ্যে জনগণের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে তিনি। এছাড়াও সাধারণ জনতার মাঝে দীর্ঘ দিনের যে সংশয় ছিল, ‘ভয়, পুলিশ সহযোগীতার কাজে টাকা লাগে এ সংশয়ও তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন চিরতরে। পুলিশের প্রতি নির্ভরশীলতার অভাবে অনেক মানুষেরই ছোটখাটো কোনো বিষয় নিয়ে পুলিশের কাছে যেতে অনিহা ছিল। অনেকে নিরবে-নিবৃত্তে প্রভাবশালীদের ছোটখাটো জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে গেছেন। এতে অপরাধীদের অপরাধের মাত্রা ছাড়িয়েছিল। এসব সামাজিক সমস্যা নিরসনে ওসি তার অফিস কক্ষে নিয়মিত সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনে থাকেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ায় অপরাধীদের উৎসাহে অনেকটাই ভাটা পড়েছে এখন। একান্তে সাক্ষাতকালে তিনি এসব কথা বলেন।
গত (২৫ নভেম্বর২০২০) তারিখে তিনি চারঘাট মডেল থানায় যোগদান করেন। ওসি মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি পুলিশে যোগদানের পর থেকে মাদক, জঙ্গি, সন্ত্রাস, ইভটিজিংকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করি ও বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছি। আমার কাছে প্রতিটি মানুষই আপনজন তবে কোন অপরাধীরা পার পাবে না। আমার অফিসে একজন ধনী প্রভাবশালী ব্যক্তি আসলে যে সম্মান পাবে, ঠিক তেমনি দিন মজুর রিক্সা চালক আসলেও ঠিক একই সম্মান পাবে। মানুষের সেবা করাই আমার মূল লক্ষ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, করোনার থাবায় যখন থমকে গিয়েছিল পৃথিবী। পাল্টে গিয়েছিল চিরচেনা পরিবেশ। মৃত্যুর ভয়ে আপন মানুষগুলোও যখন পর হয়ে গেছিল। এর মধ্যে ব্যতিক্রম মানবিক কিছু মানুষও রয়েছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন ওসি মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। মৃত্যুভয়কে পরোয়া না করে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন তিনি। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে সম্মুখে থেকে যুদ্ধ করে গিয়েছিলেন এ পুলিশ অফিসার। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা মানুষের নিরাপত্তা, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত, বাজার মনিটরিং সহ নানান কাজে কাজ করতেন তিনি নিজেই। এছাড়া সকল পুলিশ সদস্য যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে এজন্য সকল সদস্যদের মাঝে একাধিকবার সুরক্ষা সামগ্রী মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, গ্লাবস ও পিপিই বিতরণ করেছেন। থানায় পুলিশ ছাড়াও অনেক মানুষের আনাগোনা থাকায় থানা ভবনের সামনে স্থাপন করেছেন হাত ধোয়ার বেসিন। এইতো গেলো নিজের সহকর্মীদের গল্প অপরদিকে নিজের থানা এলাকায় অসহায় মানুষদের জন্য দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন মানবিক এ অফিসার। সরকারের তরফ থেকে যেসব খাদ্য সামগ্রী এসেছিল তার সঠিক বণ্টন করেছেন। বিতরণ করেছেন প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মাঝে। যারা চক্ষুলজ্জার ভয়ে সংশ্লিষ্ট স্থানে ত্রাণ নিতে আসতে পারেনি, তাদেরকে গোপনে বাসায় ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। সত্যিকারের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের খাবার সামগ্রী দেয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করে রাতের আঁধারেও এলাকা এলাকায় চষে বেড়িয়েছেন তিনি।
স্থানীয় একজন যুবক বলেন, করোনায় সময় বৃদ্ধ বাবা-মা ও পরিবার নিয়ে সারাদিন অনাহারে ছিলাম, একজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম থানায় গেলে বড় স্যারের (ওসি মুহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম ) সঙ্গে দেখা করলে জুটবে খাবার। রাতেই থানায় চলে গিয়েছিলাম। ঘুরতে ঘুরতে খুঁজে বের করলাম বড় স্যারকে। স্যারকে বলার পর স্যার নিজের হাতে চাউল, ডাল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় এক সপ্তাহের খাবার দিয়ে দিলেন। এভাবে অসংখ্য অসহায় পরিবারের পাশে এ ক্রান্তিকালে ছিলেন মানবিক ওসি জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি আরো বলেন, ওসি জাহাঙ্গীর আলম স্যার বামনদিঘী হাজিপাড়ার মৃত্যু সলেমানের বিধবা স্ত্রী শাহাজাদীর ঘর নির্মান করার জন্য নিজের হাতেই মাটি টেনে সেই বিধবার ঘর তৈরী করে দেয় শুধু তাই নই কোন অসহায় গরীব পরিবারের কেউ মারা গেলে কাফনে কাপড় কিনে দেন এই ওসি।
চারঘাট মডেল থানায় যোগদানের পর থেকে ওসি জাহাঙ্গীর আলম সাধারণ মানুষের কাছে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন পুলিশ শোষক নয়, জনগণের বন্ধু।