নিউজ ডেস্ক: আজ ৫ আগস্ট। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র ও ক্রীড়া সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের ৭২ তম জন্মবার্ষিকী আজ।
১৯৪৯ সালের এই দিনে শেখ কামাল তদানীন্তন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাত্রিতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে জাতির পিতার হত্যাকারী মানবতার ঘৃণ্য শত্রুদের নির্মম-নিষ্ঠুর বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে শাহাদাতবরণ করেন।
শহীদ শেখ কামাল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত, সংগ্রামী, আদর্শবাদী কর্মী হিসেবে ’৬৯-র গণঅভ্যুত্থান ও ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা পালন করেন।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কস্থ বাসভবন আক্রান্ত হওয়ার আগ মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন্ড লাভ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন। বহুমাত্রিক অনন্য সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক শহীদ শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি.এ. অনার্স পাস করেন। তিনি বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অন্যতম উৎসমুখ ‘ছায়ানট’-এর সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পাশাপাশি সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে সমাজ চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে থিয়েটার আন্দোলনের ক্ষেত্রে তিনি প্রথমসারির সংগঠক ছিলেন।বন্ধু শিল্পীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী’।
শেখ কামাল ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনয় শিল্পী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচ- উৎসাহ ছিল তাঁর। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
শেখ কামাল দেশে নান্দনিক ফুটবল ও ক্রিকেটসহ অন্যান্য দেশীয় খেলার মানোন্নয়নে অক্লান্ত শ্রম দিয়ে অপরিসীম অবদান রেখেছিলেন। নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষে প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলতেন এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করতেন।
১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লু’ খেতাবপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য অ্যাথলেট সুলতানা খুকুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাত বরণের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এম. এ শেষ পর্বের পরীক্ষার্থী ছিলেন এবং বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলো আজ স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাযথ মর্যাদায় শেখ কামালের জন্মদিন পালন উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ধানমণ্ডিতে আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে।
সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত শেখ কামালের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করা হবে।এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করতে নানাবিধ কর্মসূচি পালন করবে।