বিশেষ প্রতিনিধি (সাতক্ষীরা)॥ সকালে ঘাসের ডগায় শিশির ভেজা মুক্তকণা জানান দিচ্ছে শীতকাল চলছে। সকাল-সন্ধ্যায় হালকা মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে। গরম কাপড় ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। আর শীতের আগমনে কুমড়া বড়ি তৈরীর ধূম পড়েছে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে। এ মৌসুমে কুমড়া বড়ি তৈরী করে কিছুটা বাড়তি আয় করছেন গ্রামীণ নারীরা। সারা বছরই কমবেশী কুমড়া বড়ি তৈরী হয়। তবে শীত মৌসুমে এটার চাহিদা বেশি থাকে। আর এ সুযোগে গ্রামীণ নারীরা বাড়তি আয় করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কুমড়া বড়ি তৈরীর প্রধান উপকরণ মাসকালাই ও কুমড়া। বিভিন্ন হাট-বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এই সুস্বাদু খাবার কুমড়া বড়ি। মাসকলাই ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত টাকা কেজি বিক্রয় হচ্ছে। একটি বড় আকারে কুমড়া ৮০-১০০ টাকা। কুমড়ার বড়ি তৈরীর জন্য মাসকালাই প্রথমে রোদে শুকিয়ে যাতায় ভেঙে পরিষ্কার করে ৩-৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ১০কেজি মাসকালাই থেকে আট কেজি ডাল পাওয়া যায়। এর সাথে ৪-৫ কেজি ওজনের কুমড়া এবং ২০ টাকার মসলা দিতে হয়। এরপর ভোর রাত থেকে সেটি শিল-পাটায় ডাল মিহি করে গুঁড়ো করা হয়। বর্তমানে অনেক এলাকায় মেশিনের সাহায্যে প্রতিকেজি ২০টাকা করে মাসকালাই ও কুমড়া দিয়ে মিহি করা হচ্ছে। সকাল থেকে বেলা প্রায় ১০টা পর্যন্ত কুমড়া বড়ি তৈরীর কার্যক্রম চলে। কুমড়া বড়ি তৈরির পর ২-৩দিন একটানা রোদে শুকাতে হয়। সূর্যের আলো একটু কম হলে ৩-৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। ৮ কেজি কাচাঁমাল শুকিয়ে প্রায় ৬ কেজি কুমড়া বড়ি পাওয়া যায়। শুকিয়ে খাবার উপযোগী হলে হাট-বাজারে খুচরা ও পাইকারী বিক্রয় করা হয়। নানান জাতের তরকারির সাথে কুমড়া বড়ি রান্না করলে খাবারে এনে দেয় ভিন্ন রকমের স্বাদ। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীরা বসে না থেকে সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়া বড়ি তৈরি করে থাকেন। আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি এলাকার হাবীবা সুলতানা বলেন, কুমড়া বড়ির আট কেজি কাঁচামাল তৈরীতে প্রয় ৮০০ টাকা খরচ। আর শুকিয়ে পাওয়া যায় ছয় কেজি কুমড়া বড়ি। প্রতিকেজি কুমড়া বড়ি ২০০-২৫০ টাকা কেজি পাইকারী বিক্রি হয়। আর লাভ থাকে প্রায় ৪০০ টাকা। তবে আবহাওয়া একটু খারাপ হলে কুমড়া বড়ির রং হলুদ ও কালচে হয়ে যায়। অনেক সময় লোকসান গুনতে হয়। তিনি আরও বলেন, সেই ভোর থেকে বেলা ১০-১১টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। ৩-৪ দিন ধরে শুকাতে হয়। যে হারে পরিশ্রম হয়, সে তুলনায় দাম পাওয়া যায় না। তবে যা পাওয়া যায় তা দিয়ে স্বচ্ছলতার সাথে চলা যায়। আর সাংসারিক কাজের পাশাপাশি এ কাজ করা হয়। তবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এসব গ্রামীণ নারীরা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন সুধী সমাজ।