রান্না ঘরে একের পর এক পদ রান্না করেই চলেছে মৈত্রী। আজ মঙ্গলবার তার ওপর আবার তার বাড়িতে ননদ সহ আরো কিছু আত্মীয় স্বজন এসেছে। সেই ভোর ছটা থেকে রান্নাঘরে ঢুকেছে এখন প্রায় একটা বাজতে চললো তবুও রান্না ঘর থেকে বেরতে পারল না মৈত্রী। সকালের ব্রেকফাস্ট তারপর আবার দুপুরের খাবারের আয়োজন মধ্যে সকাল থেকে যে তার পেটে বিন্দুমাত্র খাবারের দানা পড়েনি তার হুসমাত্র তার মধ্যে নেই। সে ব্যস্ত ভীষণ সবার জন্য রান্নার আয়োজনে। তাড়াহুড়ো করে রান্না শেষ করে আবার পরিবেশন করতে লেগে পড়লো সে। এ বাড়ির সবাই একটার সময় খেতে বসেন। সময়ের একটু পরিবর্তন হলে বাড়ি মাথায় তুলবেন। বিশেষত মৈত্রীর স্বামী বিনয়। আজ পাঁচ বছর তাদের বিয়ের বয়স হলেও মৈত্রীর বিন্দু মাত্র খারাপ লাগা, ভালো লাগার খোঁজ রাখেনা বিনয়। এক ছাদের তলায় দুজন থেকেও তারা একে অপরের ভীষণ অপরিচিত।
দুপুরে খাবারের টেবিলে বিনয় রিতিমত চিৎকার করে উঠলো সব লোকজনের মাঝে সাথে অপমান। কারণ ডালে অল্প লবণ কম হয়েছিল। তবুও একবিন্দু জল পড়েনি মৈত্রীর চোখ থেকে। তাড়াতাড়ি সবার সব কিছু প্রয়োজন মিটিয়ে চোখ গেল ঘড়ির কাঁটার দিকে দুটোর ঘর পেরিয়েছে। তার শাশুড়ি মা উষা দেবীর খাবার সময় হলো। তাড়াতাড়ি খাবারের থালা নিয়ে ছুটলো সে উনার ঘরের দিকে। কারণ উষা দেবী প্যারালাইসিস আজ প্রায় দু বছর তিনি নিজের ঘরেই খাওয়া দাওয়া করেন।
তাড়াতাড়ি করে মৈত্রী খাবারের থালা নিয়ে উষা দেবীর ঘরে ঢুকতেই তিনি বললেন
একটু আমার কাছে আয়, একটু বোস আমার কাছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো কিন্তু তোর পেটে কিছু পড়ার দরকার নেই বল! আর এই যে আজ তোর পিরিয়ডের দ্বিতীয় দিন। তোর তো ভীষণ ব্যাথা হয় পেটে। তা একটু নিজের খেয়াল রাখবি না!
মৈত্রী এগিয়ে গিয়ে উষা দেবীর কাছে বসলো। উষা দেবী একটু মৈত্রী কে একটু কাছে টেনে নিয়ে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো এবং সস্নেহে মাথার হাত দিতেই যেন সমস্ত কষ্ট গুলো বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পড়লো চোখ দিয়ে।
উষা দেবী তার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বললেন
আমার ছেলের কথায় কিছু মনে করিস না মা। দোষ ওর নয়, বোধহয় আমার মানুষ করাতে কোনো ত্রুটি ছিল রে মা।
তারপর উষা দেবী নিজের হাতে চোখ মুছিয়ে খাবার খাইয়ে দিতে থাকে মৈত্রী কে। আর তাকে বকাঝকা করতে থাকে ঠিক মতো নিজের খেয়াল না রাখার জন্য। একদমই নিজের মায়ের মতোন। এই মানুটার জন্য বোধহয় তার এই বাড়ির প্রতি এতো মায়া। এই মানুষটা তাকে মায়ের মতো আগলে রাখে, তাকে বোঝে খারাপ লাগার ভালো লাগার কথাগুলি মনে রাখে। এক মানুষটাই তাকে বুকে জড়িয়ে তার সারাদিনর কষ্ট, অপমান গুলো একদম ভুলিয়ে দেয়। এই বাড়িটা তাকে অনেক অপমান দিলেও তাকে মায়ের অভাব দেয়নি। এই মানুষটা কখনও তার শাশুড়ি মা হয়নি হয়েছে নিজের মা। এ এক অনন্য বন্ধন। যার কোনো ব্যাখ্যা নেই বৈশিষ্ট্য ও নেই কেবল এক অনুভূতি যুক্ত মায়ার বন্ধন।।
কলমে – ভবানী কৃষ্ণা দাস
চিত্রাঙ্কন – মামনি