সিনিয়র প্রতিনিধি: সরকার শহরের সেবা গ্রামে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে গ্রামে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সেবা পৌঁছে দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বর্তমান সরকার দারিদ্র বিমোচনে ১৪৩ টি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহন করেছেন। পাশাপাশি কর্মজীবি নারীদের এগিয়ে নিতে ডে-কেয়ার সম্পর্কিত আইন পাশের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে ডে-কেয়ার স্থাপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষনের মাধ্যমে আন্তনির্ভরশীল করা হচ্ছে। ‘নগর হতদরিদ্রদের নাগরিক ও পরিষেবা সুরক্ষা অধিকার’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের আর্থিক সহযোগিতায় সাজেদা ফাউন্ডেশন, নারী মৈত্রী, সীপ এবং কাপ সকাল ১১.০০ ঘটিকায় সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নগর হতদরিদ্রদের নাগরিক ও পরিষেবা সুরক্ষা অধিকার’ শীর্ষক সংলাপে সভাপতিত্ব করেন কাপ এর চেয়ারম্যান ডা. দিবালোক সিংহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি: জেনা: মো: জোবাইদুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির, মোহা: কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর, ওয়ার্ড ওয়াইড এর প্রোগ্রাম পরিচালক গ্রিটা ফিটিরিয়াল্ড, শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারসিক এর পরিচালক পাভেল পার্থ, ডেইলি অবজারভার এর সিনিয়র রিপোর্টার বনানী মল্লিক এবং নগর গবেষণা কেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা ইসরাত নাজিয়া। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাপ এর এ্যাডভাইজার মোঃ মাহবুল হক।
ব্রি: জেনা: মো: জোবাইদুর রহমান বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং তাদের নাগরিক সেবা নিশ্চিতে উত্তর সিটি কর্পোরেশন কাজ করে যাচ্ছে। জন্মনিবন্ধন, ভোটার আইডি কার্ড এবং বিভিন্ন ভার্তা প্রাপ্তি সহজতর করতে কাজ করে যাচ্ছে।
ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, এসডিজি এর ১১ এর লক্ষ্যমাত্রা হলো ‘টেকসই নগর এবং জনপদ।’ এখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, অভিঘাতসহনশীল এবং টেকসই নগর ও জনবসতি গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য পর্যাপ্ত, নিরাপদ এবং মৌলিক সুবিধায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করাসহ, বস্তির উন্নয়ন সাধনে কাজ করে যাচ্ছে।
গ্রিটা ফিটিরিয়াল্ড বলেন, দরিদ্র মানুষকে পিছনে রেখে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব নয়। অন্তর্ভুক্তমূলক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যেখানে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সকলের অধিকার নিশ্চিত হবে। মোহা: কামরুজ্জামান বলেন, সমাজ সেবা অধিদপ্তরে বর্তমানে ৫৪ টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। নগরের অতিদরিদ্র কিশোরী, কিশোর ও নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি এবং দরিদ্র কর্মজীবী পরিবারগুলোর শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সেবা নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আবুল হোসেন বলেন, দেশের নাগরিক হিসেবে সকল নাগরিকের উন্নত জীবন পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে রাষ্ট্রের একটি মৌলিক দায়িত্ব হল পরিকল্পিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে, উৎপাদন শক্তির ক্রমাগত বৃদ্ধি এবং জনগনের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সাংস্কৃতিক মানের উন্নয়ন। এ লক্ষ্যে সকলকে সরকারের সাথে একযোগে কাজ করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. দিবালোক সিংহ বলেন, ২০০৫ সালে মোট বস্তিবাসীর সংখ্যা ছিল ৩৪,২০,৫২১ জন যা ঢাকার মোট জনসংখ্যার ৩৭.৪%। বস্তিবাসী তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে বস্তিবাসীর জন্মনিবন্ধন ও আইডি কার্ড প্রাপ্তি কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগর অতিদরিদ্রদের বিনামূল্যে/ স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারের অধীনে সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড ভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের আওতায় পথবাসী ও বস্তিবাসীদের স্বাস্থ্য সেবা কার্ড প্রদান করা প্রয়োজন। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের অধীনে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় জন্ম নিবন্ধনের জন্য অনলাইন ফরমেটে সংশোধন/ সংযোজন পূর্বক নগর দরিদ্রদের জন্য নিবন্ধন নিশ্চিতকরা।
মূল প্রবন্ধে মোঃ মাহবুল হক বলেন, বস্তিতে প্রতিটি ল্যাট্রিন /টয়লেট গড়ে ১৫০-২০০ জন মানুষ ব্যবহার করে যা কোন ভাবেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এছাড়া তারা একটি বাতির জন্য দেন ২৫০ টাকা। দুইটি বাতি একটি ফ্যান ব্যবহার করলে মাসিক ভাড়া দেন ৭৫০ টাকা। মৌলিক অধিকার খর্ব করে সরকারী পানি বিদ্যুৎ, গ্যাস কিনতে হয় বাজার মূল্যের চাইতে অনেক বেশী দামে। বস্তিবাসীরা যে আয়তনের জন্য ২৫০০-৩০০০ টাকা মাসিক ভাড়া দেয়, যা বনানী-গুলশানের এপার্টমেন্টের ভাড়ার চেয়েও তারা বেশী ভাড়া দেয়।