সিনিয়র প্রতিনিধি: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের জোরালো তৎপরতার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন মার্কিন কংগ্রেসে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিক্স। গত ৩১ জানুয়ারি .সোমবার নিউইয়র্কে এক সমাবেশে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই কংগ্রেসম্যান এ তথ্য দেন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই কংগ্রেসম্যানের নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের জন্য মার্কিন রাজনীতিতে কমিউনিটির লিডার মোর্শেদ আলম কর্তৃক ‘বাংলাদেশিজ ফর গ্রেগরি মিক্স’ ব্যানারে এই মধ্যাহ্ন ভোজ সমাবেশে গ্রেগরি মিক্স বলেন, বাংলাদেশের আরও বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের জোরালো তদবির চলছে। তবে তা চাইলেই মিলবে না।খবর বাপসনিউজ।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারী প্রবাসীদের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেগরি মিক্স বললেন, ‘বাংলাদেশ কিংবা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে স্যাঙ্কশন দেওয়া হয়নি। আমি বিষয়টি নিশ্চিত করছি। আমরা বাংলাদেশের জনগণ ও দেশটির সরকারের সঙ্গে আগের মতোই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ অব্যাহত রেখেছি। তাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্যাঙ্কশন দেওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবকাশ থাকা উচিত নয়।
বলতে দ্বিধা নেই, একটি মহল জোরালো তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের। কিন্তু আমরা তা করিনি। ’
এই কংগ্রেসম্যান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি প্রকৃত সত্য জানতে। আমি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলব।
স্টেট ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের সঙ্গেও বসব। ঢাকায় কর্মরত আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করব। এর পরই আমি সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করব। কারণ বিষয়টি ততটা সহজ নয় যে, না জেনে কম্প্রোমাইজ করে ফেলব। ’ কংগ্রেসম্যান বলেন, ‘গুটিকয় মানুষের কারণে পুরো ডিপার্টমেন্টকে শাস্তি প্রদান সমীচীন নয়।
তাই যেসব র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ’
কংগ্রেসম্যান বলেন, ‘আমি সবকিছু যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্তে আসতে চাই। ’ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রসঙ্গ টেনে গ্রেগরি মিক্স বলেন, ‘গত বছর ৬ জানুয়ারিতে যারা ক্যাপিটল হিলে জঙ্গি হামলা চালিয়েছে তারা নাকি ভালো মানুষ। ট্রাম্প পুনরায় যদি প্রেসিডেন্ট হন তাহলে তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলেছেন। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু ওই দিনের বর্বরোচিত হিংস্র আচরণে লিপ্তদের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো শাস্তির পদক্ষেপ নিইনি। একটি কমিশন গঠন করে তদন্ত চালানো হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সবকিছুৃ করা হবে। একইভাবে বাংলাদেশ ইস্যুতেও আমি রীতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে আগ্রহী। এখানকার সব মহলের মতামত জানার পর এ বছরই আমি ঢাকায় যেতে চাই সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য। ঢাকায় আমাদের রাষ্ট্রদূতের কাছে জানব র্যাবের অবস্থান ও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ। তবে ইতোমধ্যে যেটি হয়েছে তা আমাদের প্রেসিডেন্টের চয়েজ অনুযায়ী কয়েকজনের বিরুদ্ধে স্যাঙ্কশন দেওয়া হয়েছে। ’ কংগ্রেসম্যান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘আমি আপনাদের কাছে অঙ্গীকার করতে চাই, আমি ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলব। যেহেতু তিনি গ্রাউন্ডে রয়েছেন। কংগ্রেশনাল ক্যালেন্ডারের ভিত্তিতে বছরের যে কোনো সময়ে ঢাকায় যাব। এর আগে অবশ্যই বাংলাদেশি-আমেরিকান যারা রয়েছেন তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকবে। আপনাদের মতামত, মন্তব্য, সুপারিশ, অনুরোধ-উপরোধকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। ’
বাংলাদেশের আরও বহু কর্মকর্তা/রাজনীতিকের বিরুদ্ধে স্যাঙ্কশনের জোরালো তদবির প্রসঙ্গে কংগ্রেসম্যান বলেন, ‘তাদের কথা অনুযায়ী আমি কিছুই করব না। তারা চাইছে আরও বহু কর্মকর্তাকে নিষিদ্ধ করতে। সেটা সম্ভব নয়। সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। এ জন্য আমি উভয় পক্ষের সঙ্গেই কথা বলতে চাই। কংগ্রেসে এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক আইল্যান্ড সম্পর্কিত সাব-কমিটির চেয়ারম্যানের মতামতও জানতে চাইব। প্রয়োজনে কংগ্রেসে একটি শুনানির আয়োজনও করব। সে সময় বাংলাদেশ নিয়ে কর্মরত সবার কথা শুনব। সেই শুনানির ভিত্তিতে আমরা কংগ্রেসের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে একটি সুপারিশ পেশ করব। ’
তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে : পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বাংলাদেশের জাতির জনক এবং তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার জন্য আদালত কর্তৃক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরীকে যুক্তরাষ্ট্র বসবাসের সুযোগ দিয়েছে। এটি কি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়?- এমন এক প্রশ্নে ফরেন এফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিক্স বলেন, ‘বিষয়টি সত্য হলে তা অবশ্যই দুঃখজনক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। বিষয়টি আমি অবশ্যই খুঁজে দেখব। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলব। ’
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং মহলবিশেষের বাংলাদেশবিরোধী অপতৎপরতার আলোকে কংগ্রেসম্যানের উদ্দেশে এ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আমেরিকা-বাংলাদেশ অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্টও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক এম এ সালাম, উপদেষ্টা ও কমিউনিটি লিডার ড. প্রদীপ কর, দপ্তর সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী,আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শাহ মোঃ বখতিয়া,মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মমতাজ শাহনাজ,যুগম সম্পাদক রুমানা আক্তার ,শাখাওয়াত আলী কংগেসম্যানকে প্রশ্ন করেন।শুরুতে সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বাংলাদেশের উন্নয়ন-অভিযাত্রায় শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোকপাতকালে বলেন, একটি মহল আবারও বাংলাদেশকে চরমপন্থি-সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করতে চায় বলেই এই আমেরিকায় নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। নির্জলা মিথ্যাচার করছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধুদের সজাগ থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সাহসী পদক্ষেপ সর্বজনবিদিত বলেই দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে।
সমাবেশে বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার চুন্নু, এনআরবিসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ফরাসত আলী, কুইন্স ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার রিচার্ড ডেভিড, শ্রমিক ইউনিয়নের লিডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনির ,জালালউদ্দিন জলিলপ্রমুখ। সমাপনী বক্তব্যে হোস্ট মোর্শেদ আলম কংগ্রেসম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচারণায় লিপ্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে মার্কিন কংগ্রেসকে সজাগ থাকতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন থামিয়ে দিয়ে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্তরা কখনই মানবতার বন্ধু হতে পারে না। সব প্রবাসীকে তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।