বিশেষ প্রতিনিধি: আশাশুনির দরগাহপুর ইউনিয়নের খরিয়াটিতে সংখ্যালঘু ইস্যুকে পুঁজি করে জমি জবর দখলের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন ঘুরে এবং জামির কাগজপত্রাদি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, খরিয়াটি মৌজার এসএ-২৩৫, সাবেক ১২৭০ ও ১২৭২ এর হাল দাগ ২১৬৫ এর সাড়ে ৩৩ শতক জমি এসএ মুলে মালিক একই গ্ৰামের সহচারী দাশী। খরিয়াটি গ্ৰামের মৃত আকবার আলী গাজীর ছেলে গহর আলী গাজী সহচারী দাশীর থেকে ক্রয় করে মালিকানা প্রাপ্ত হন। গহর আলী গাজী তার জীবদ্দশায় ১৯/০১/৯৪ ইং তারিখে তার ৩পুত্র আছাফুর গাজী, মুজিবর গাজী ও সাইদুর গাজীর নামে দানপত্র দলিল করে দেন (দানপত্র দলিল নং-২৯৭)। পরবর্তীতে ৯ বছর পরে গহর আলী গাজী ০৫/০৮/২০০৩ ইং তারিখে দেওয়ানি মামলা ১০৭/২০০২ এর ডিগ্ৰি প্রাপ্ত হন। ডিগ্ৰি প্রাপ্তির পর দানপত্র দলিল বাতিল হয়ে তিনি আবারও মালিকানা প্রপ্ত হয়ে তার কন্যা রাশিদা খাতুনের নামে হেবার ঘোষণা করেন। যাহার দলিল নং- ৪০৮৩, তারিখ- ২৭/০৯/২০১০ ইং। কন্যা রাশিদা খাতুন নিজের নামে যথারীতি চুড়ান্ত প্রকাশিত খতিয়ান সৃষ্টি করে। রাশিদা খাতুন পরবর্তীতে আনার আলী গাজী, আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন, হাফিজুল ইসলাম, মোত্তাজুল ইসলাম, ফারুক গাজী, আব্দুল বারি গাজী, জাকির হোসেন ও আব্দুর রব গাজী এর কাছে বিক্রি করে দেন। যাহার দলিল নং- ৪২৫২, তারিখ- ২০১১ইং। অর্থাৎ সর্বশেষ মিউটেশন, খাজনাদি পরিশোধান্তে জমির মালিকানা প্রপ্ত হন উল্লেখিত ৮ জন।
অপর দিকে একই গ্ৰামের নগেন্দ্রনাথ সরকারের ছেলে চিত্ত রঞ্জন সরকার গং গহর আলী গাজীর ছেলে (সে সময়ে দানপত্র সূত্রে মালিক) আছাফুর, মুজিবর ও সাইদুলের থেকে ক্রয় করেন। গহর আলী গাজী কর্তৃক দায়েরকৃত দেওয়ানী মামলার মাধ্যমে দানপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় পূনরায় গহর আলী গাজী জমির মালিকা পেয়ে মেয়ে রাশিদার কাছে বিক্রি করে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনার আলী গং এর জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, জমি-জমা নিয়ে ভাই-ভাই এমনকি পিতা- পুত্রের মধ্যেও ঝগড়া বিবাদ বেঁধে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে সেটা কোর্ট পর্যন্তও গড়ায়। যুগযুগ থেকে আমরা হিন্দু-মুসলিম মিলে মিশে বসবাস করে আসছি। চিত্ত রঞ্জন গং’রা জোর পূর্বক আমাদের সম্পত্তি দখল নিতে চায়। হয়তো প্রথমে শুনে বিষয়টি বিশ্বাস করতে চাইবে না কেউ। আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয়দের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা আসেন আমাদের দুই পক্ষকে নিয়ে বসেন। বসলে সব সমাধান হয়ে যাবে। তাছাড়া এভাবে যদি জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘুর মতো স্পর্শ কাতর বিষয় টেনে নিয়ে আসেন তাহলে ধীরে ধীরে আমাদের হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই সম্প্রীতি নষ্ট হয়ে যাবে। চিত্ত রঞ্জন সরকার গং যদি উল্লেখিত জমির মালিকানার দাবিতে কোন কাগজ পত্র দেখাতে পারেন তাহলে আমরা জমি ছেড়ে চলে আসবো। দানপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় তারা বিআরএস বা একাধিক ধারায় রেকর্ড সংশোধনের সুযোগ পেয়েও কোন সুযোগেরই আশ্রয় নেন নি। এককথায় বলতে গেলে তারা সংখ্যালঘু ইস্যুকে পুঁজি করে আমাদের জমি জবর দখলের চেষ্টার করছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত চিত্ত রঞ্জন সরদার প্রতিবেদককে জানান, আমরা গহর আলী গাজীর ছেলে আছাফুর গাজী, মুজিবর গাজী ও সাইদুল গাজীর থেকে জমি ক্রয় করি। দানপত্র দলিল বাতিল হলে আছাফুর, মুজিবর ও সাইদুলের ঐ সম্পত্তির উপর কোন শর্ত থাকে না তাহলে কিভাবে আপনারা জমির মালিকানা দাবি করেন ? তাছাড়া এত দিন জমি ক্রয় করে বর্তমান রেকর্ড বা মিউটেশন এমনকি খাজনা পরিশোধ কেন করেন নি ? এ ধরনের একাধিক প্রশ্নের তারা কোন যুক্তিসংগত জবাব দিতে পারেন নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, দু’একটি মিডয়া এ ঘটনাটিকে সংখ্যালঘুর উপর নির্যাতন বলে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করেছিলো।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি এই জমি কেন্দ্রিক দুই পক্ষের মধ্যে কিছুদিন পূর্বে মারামারির ঘটনা ঘটে পরবর্তীতে সেটা মামলায় রুপ নেয়। একটি মহল বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করেছে। স্থানীয় হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের সচেতন মহল আশাশুনি উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য জোটসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান তারা যেন অতিদ্রুত উল্লেখিত বিষয়টি আমলে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেন। আর সেটা না করা হলে ভবিষ্যতেও এই জমি নিয়ে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা থেকেই যাবে।