নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার সেনপুর এলাকায় স্বর্ণ চোরাকারবারী কাছ থেকে স্বর্ণ ধরে মাদক বানিয়ে স্বর্ণ আত্মসাৎ করার অভিযোগে সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফ হোসনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। ১৮ মে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন এ আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগের ১৮ মে তারিখের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে সিলেট রিজিয়ন ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার ও সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানা এলাকায় পুলিশ কর্তৃক স্বর্ণ চোরাকারবারী বিপ্লব চ্যাটার্জির কাছে থাকা ১২০ভরি স্বর্ণ উদ্ধারপূর্বক, পাটকেলঘাটা থানায় উদ্ধারকৃত স্বর্ণের জব্দ তালিকা তৈরি হওয়ার বিষয়টি সেই সময়কার পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনকে অবহিত করা হয়। কিন্তু উক্ত ঘটনায় থানায় স্বর্ণ চোরাচালানের মামলা রেকর্ড না হয়ে মাদক মামলার রেকর্ড হওয়া, স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনা মাদক উদ্ধারের ঘটনায় সাজানোর বিষয়টি জানা সত্ত্বেও দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়া এবং এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অসত্য প্রতিবেদন প্রেরণের উত্থাপিত অভিযোগের অনুসন্ধান প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র এ বিভাগে প্রেরণ করতঃ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ অধিদপ্তর, ঢাকা হতে গত ২০১৯ সালের ৪ মার্চ ৬৯ নম্বর স্মারকে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়।
তারপ্রেক্ষিতে গত ২০১৯ সালের ৯ জুলাই ৩১ নম্বর স্মারকে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নম্বর ০১/২০১৯ রুজুকরণসহ অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী প্রেরণ করা হয়। অতঃপর অভিযুক্ত কর্মকর্তা গত ৪ আগস্ট, ২০১৯ তারিখে ব্যক্তিগত শুনানীতে অংশগ্রহণের ইচ্ছা পোষণপূর্বক অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণীর জবাব প্রদান করেন এবং গত ২১শে অক্টোবর ২০১১ তারিখ ব্যক্তিগত শুনানীতে উপস্থিত হন।
সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, পুলিশ অধিদপ্তর হতে প্রাপ্ত তথ্যাদি এবং শুনানীতে অংশগ্রহণকালে তার বক্তব্য ইত্যাদি পর্যালোচনায় অভিযোগটি তদন্ত হওয়া সমীচীন মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় গত ২৫ জুন, ২০২০ তারিখের ১৪ নম্বর স্মারকে পুলিশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ আতাউল কিবরিয়াকে বিভাগীয় মামলাটি তদন্তপূর্বক মতামতসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।
পুলিশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি ও তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আতাউল কিবরিয়া গত ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে মতামতসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর তারিখের ৩৯ নম্বর স্মারকে ২য় কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। তদপ্রেক্ষিতে গত ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারী ১৬ নম্বর স্মারকে তিনি ২য় কারণ দর্শানোর জবাব দেন।
সিলেট রিজিয়ন ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারী তারিখের ১৬ নম্বর স্মারকে দাখিলকৃত দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৪(৩)(গ) বিধিমোতাবেক গুরুদ- হিসেবে তাকে চাকরি হইতে অপসারণ”-এর সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক প্রস্তাবিত গুরুদ- আরোপের বিষয়ে ঞযব ইধহমষধফবংয ঢ়ঁনষরপ ঝবৎারপব ঈড়সসরংংরড়হ (ঈড়হংঁষঃধঃরড়হ) জবমঁষধঃরড়হং, ১৯৭৯ এর ৬ নং রেগুলেশন মোতাবেক গত ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখের ২৬ নম্বর স্মারকে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শ চাওয়া হয়। কমিশন আলতাফ হোসেন, পিপিএম (বিপি নং-৭২০১০০৮১৯০), পুলিশ সুপার, ট্যুরিস্ট পুলিশ, সিলেট রিজিয়ন (সাবেক পুলিশ সুপার, সাতক্ষীরা)-কে সরকারি চাকরি হইতে অপসারণ”-এর সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণপূর্বক গত ০৪ এপ্রিল, ২০২২ তারিখের ২২ নম্বর স্মারকে পত্র প্রেরণ করে, সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে রুজুকৃত এ বিভাগীয় মামলায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি মোতাবেক ‘অসদাচারণ’-এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন প্রস্তাবিত দ-ের সাথে একমত পোষণ করায় একই বিধিমালার ৪(৩)(গ) বিধিমতে গুরুদন্ড হিসেবে তাকে “চাকরি হইতে অপসারণ”-এর বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেন। সাতক্ষীরার সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী আনীত “অসদাচরণ (গরংপড়হফঁপঃ)” এর অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় একই বিধিমালার ৪(৩)(গ) বিধি মোতাবেক গুরুদ- হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে তাকে “চাকরি হইতে অপসারণ করা হলো।