নিজস্ব প্রতিবেদক:-
দেশের বহুল আলোচিত‘জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া দীর্ঘ ৩২ বছর কারাভোগের পর শেষে মুক্তি পেয়েছেন। আজ রবিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ২৬ জনকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো এই আলোচিত ‘জল্লাদ’।
বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু করে খাওয়ার মত একটি কাজের ব্যবস্থা এবং একটি ঘর চেয়েছেন শাহজাহান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এত বছর জেল খাটার পর আমার কিছুই নেই। আমি এখন কি করব, কোথায় যাব, কী খাব? প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আমাকে যেন বাড়িঘর ও একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন।’
এখন আপনি কোথায় যাবেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারাগারে একজন আসামি ছিলেন। তিনি খুব ভালো মানুষ। তার বাসা বসুন্ধরায়। তার বাসাতে যাচ্ছি। আপাতত সেখানেই থাকবো আমি।
২৬ জনের ফাঁসি দেওয়ার পর নিরাপত্তা বোধ করছেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শাহজাহান বলেন, ‘ফাঁসি আমার হুকুমে হয়নি। রাষ্ট্রের হুকুমে ফাঁসি দিয়েছি আমি।’
জল্লাদ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে। ৭৩ বছর বয়সী শাহজাহান ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ।
কারাগারের একটি সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালে শাহজাহান ভূইয়াকে গ্রেপ্তারের পর মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে রাখা হয়। এরপর তাকে দেশের বিভিন্ন কারাগারে রাখা হয়েছে। মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয়জন ঘাতক, ছয়জন যুদ্ধাপরাধী, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি খুকু মনির, ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ বাংলাদেশের আলোচিত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন জল্লাদ শাহজাহান।
জল্লাদ শাহজাহানের দুই মামলায় মোট ৪২ বছর সাজা হয়েছিল। এর মধ্যে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল ১৮/১৯৯২, মানিকগঞ্জ ০৩(১২)৯১, ধারা- অস্ত্র আইন ১৯(এ) মামলায় তার ১২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার অনাদায়ে আরও ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়। এ ছাড়া দায়রা ৪০/৯২, মানিকগঞ্জ ২(১২)৯১, ধারা-৩৯৬ দণ্ডবিধি মামলায় তার ৩০ বছরের সাজা হয় এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাস কারাদণ্ড হয়।
কারাগারে ভালো কাজ ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে জল্লাদের দায়িত্ব পালনের জন্য তার সাজার মেয়াদ ১০ বছর মওকুফ (রেয়াত) করা হয়। পাশাপাশি শাহজাহানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় আবেদনের প্রেক্ষিতে কারা কর্তৃপক্ষ তার জরিমানার ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে। ফলে দীর্ঘ ৩১ বছর ছয় মাস দুইদিন কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দিজীবন কাটানোর পর এখন তিনি মুক্ত হলেন জল্লাদ শাহজাহান।