নিজস্ব প্রতিনিধি:-
মহালয়ার দিন ভোরবেলায় আকাশবাণীতে প্রচারিত মহিষাসুরমর্দিনী নামক অনুষ্ঠানে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলার চণ্ডীপাঠের সুরে আজও নস্টালজিক বাঙালি সনাতন ধর্মবিশ্বাসীরা। দুই বাংলার কোটি ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী, শ্রোতাদের হৃদয়ে আজও রয়েছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। তেমনিভাবেই তাঁকে মনে রেখেছেন সাতক্ষীরার জেলার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের উথালী গ্রামের ভদ্রপাড়ার বাসিন্দারা। তবে এখানকার মানুষদের মনে রাখার কারণটাও একদম ভিন্ন। শুধু মনে রাখা নয়, প্রতিবছরের ন্যায় আজ মহালয়ার ভোরে মাইকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ শোনানোর আয়োজন করা হয়েছিল। এছাড়াও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীও পালন করেন ভদ্রপাড়ার বাসিন্দারা।
সরেজমিনে উথালী গ্রামের ভদ্রপাড়ার গেলে দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস এর ক্যামেরায় উঠে এসেছে অনেক অজানা কথা। ভদ্রপাড়ার বাসিন্দারা জানালেন, সেই ১৯৩৩ সালে আকাশবাণীতে প্রচারিত চণ্ডীপাঠ করে আলোচনায় এসেছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। সে সময় ব্রাহ্মণের পরিবর্তে কায়স্থ ঘরের সন্তানের চণ্ডীপাঠের প্রচার ঘিরেও উঠেছিল নানা বিতর্ক। তবে সুরেলা কণ্ঠের কারণেই অল্প সময়েই বাঙালি সনাতন ধর্মবিশ্বাসীরা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠকে হৃদয়ে ধারণ
করেছিল। শুধু তাই নই, ১৯৭৬ সালে আকাশবাণী এই অনুষ্ঠানের পরিবর্তে অভিনেতা উত্তম কুমারকে দিয়ে “দুর্গা দুর্গতিহারিনী’ নামে নতুন অনুষ্ঠানও শুরু করেছিলেন। নায়কের চাহিদা তখন তুঙ্গে, অল ইন্ডিয়া রেডিও কর্তৃপক্ষ ভেবেছিলেন, এতে রেডিওর জনপ্রিয়তা বাড়বে। কিন্তু অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারের পর শ্রোতাদের অনুরোধে দাবি মেনে পুনরায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বাজাতে বাধ্য হয় আকাশবাণী। ফলে সর্বশেষ সেই ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে রেকর্ড করা পূর্বের অনুষ্ঠান এখনও শোনানো হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানটি এতটাই জনপ্রিয়তা যে, প্রায় ৯০ বছর পর আজও জনপ্রিয়তা তথা মহালয়ার চণ্ডীপাঠ বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি।
স্থানীয়রা জানালেন, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পূর্বপুরুষের আদি ভিটা তালা উপজেলার উথালী গ্রামে ভদ্রপাড়ায়। আর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র দেশভাগের আগেই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’সহ বিভিন্ন থিয়েটার করতেন।
স্থানীয় গোবিন্দ ভদ্র দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র আমাদের গর্ব। একারণেই আমরা গ্রামবাসীরা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী পালন করি। এছাড়াও মহালয়ার দিনে অনুষ্ঠান করে থাকি। উনার কণ্ঠের চণ্ডীপাঠ মাইকে শোনানোর ব্যবস্থা করি। তিনি আরও বলেন, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বাবা সম্পর্কে আমার দাদু হতেন। অবিভক্ত বাংলায় তিনি কলকাতার একজন আইনজীবী ছিলেন। এজন্য দেশভাগের পর পেশার কারণেই কলকাতায় স্থায়ী হন। এ কারণে এখানে বসতবাড়ি স্থাপন না করলেও বীরেন্দ্রকৃষ্ণের বাবা পরিবারকে নিয়ে এখানে আসা-যাওয়া, জন্ম ভিটার খোঁজ-খবর রাখতেন।
স্থানীয় বনমালী ভদ্র বলেন, আমি দেশভাগের আগেই কলকাতা গিয়েছিলাম তখন আমার কাকা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বাড়িতেও গিয়েছিলাম, উনি কাজে বাইরে থাকায় দেখা হয়নি। তিনি জানান, উথালী গ্রামে যদুনাথ স্মৃতি মন্দির স্থাপনে জমি দানসহ ধীরেন্দ্রনাথ ভদ্রের বিভিন্ন অবদান রয়েছে।
স্থানীয় সুকান্ত ভদ্র বলেন, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র আমাদের অহংকার, আমরা তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। আমরা চাই তার জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী ও মহালয়ার অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যত হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠন আছে সকলেই কর্মসূচি গ্রহণ করুক।