নিজস্ব প্রতিনিধি:-
দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর শেষে মা আসছে ঘোড়ায় চেপে। করনার এই মহামারীতে মানবজীবনে আশীবাদ বয়ে আনার অভিপ্রায় আজ মানবজাতির মনে। আজ ষষ্ঠী। ষষ্ঠীকে আরেক নামে জানা হয় যা হচ্ছে বোধন। দেবী দূর্গার বোধনের দিন আজ। রামায়ণ অনুসারে লঙ্কা আক্রমণের পূর্বে দেবীপক্ষে ষষ্ঠীতে দুর্গাকে বোধন করে পূজা করেন দশরথ পুত্র রাম। চলুন প্রথমে দেখে আসি আজ ষষ্ঠীর নির্ঘন্ট। পরে আমরা দেখব বোধনের তাৎপর্য এবং কিভাবে করা হয় বোধন।
বাংলাদেশঃ
ষষ্ঠী তিথি আরম্ভ
বাংলা – ৩ কার্তিক (ভারতীয় ক্যালেন্ডার অনুসারে ১ কার্তিক), বৃহস্পতিবার।
ইংরেজি ১৯ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার।
সময় – রাত ১১ টা ০৩ মিনিটের পর থেকে
ষষ্ঠী তিথি শেষ –
বাংলা – ৪ কার্তিক (ভারতীয় ক্যালেন্ডার অনুসারে ২ কার্তিক), শুক্রবার।
ইংরেজি ২০ অক্টোবর, শুক্রবার।
সময় – রাত ০৯ টা ৩৬ মিনিট।
শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গাষষ্ঠী। পূর্বাহ্ন ৯টা ৫৭ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে কিন্তু কুলিকাবেলানুরোধে ৮ টা ২৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ড মধ্যে শ্রী শ্রী শারদীয়া দেবীর ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ (তৃতীয় কল্প) ও ষষ্ঠী বিহিত পূজা প্রশস্তা।
বোধন কি বা কেন করা হয়?
বোধন শব্দের অর্থ হল জাগ্রত করা। মর্ত্যে মা দূর্গার আবাহনের সূচনা হয় বোধন রীতির মাধ্যমে। কল্পারম্ভ দিয়ে শুরু হয় দুর্গার বোধন। সাধারণত ষষ্ঠীর সকালেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করা হয় যে, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত গোটা পূজা পর্বে যেন কোনও বিঘ্ন না ঘটে। এর পর ঘট ও জলে পূর্ণ একটি তামার পাত্র মণ্ডপের কোণে স্থাপন করা হয়। এই স্থানেই দুর্গা ও চণ্ডীর পুজো করা হয়। এর পর হয়, দুর্গার বোধন। তার পর অধিবাস, আমন্ত্রণের পর্ব। বোধনের পর বিল্ব শাখার দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। অশুভ শক্তি দূরের জন্য ঘটের চারপাশে তীরকাঠিতে সুতো জড়িয়ে আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া শুর হয়। এ ভাবেই শেষ হয় মহাষষ্ঠীর আচার।
এই আচারের একটি পৌরাণিক তাৎপর্য রয়েছে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী এ দিনই স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে পদার্পণ করেন দেবী দুর্গা। সাথে থাকেন তাঁর চার সন্তান লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী। সাধারণত এদিন দুর্গার মুখের আবরণ উন্মোচিত হয়। তবে এখন পঞ্চমী থেকে মণ্ডপে মায়ের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। মনে করা হয়, বোধনের পর প্রতিমার মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বোধন আবার অকাল বোধন হিসেবে খ্যাত। হিন্দু শাস্ত্র মতে সূর্যের উত্তরায়ন দেবতাদের সকাল। উত্তরায়নের ছয় মাসকে দেবতাদের এক দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। সকালে সমস্ত দেব-দেবীর পুজো করা হয়। আবার দক্ষিণায়ন শুরু হলে ছয় মাসের জন্য নিদ্রা যান সমস্ত দেব-দেবী। এই দক্ষিণায়ন দেবতাদের রাত। রাতে দেব-দেবীর পুজো করা হয় না। কিন্তু দক্ষিণায়নের ছয় মাসের মধ্যেই দুর্গাপুজো হয় বলে বোধনের মাধ্যমে আগে দেবী দুর্গাকে ঘুম থেকে তোলা হয়। পুরাণে এর সঙ্গে একটি কাহিনিও জড়িত। রাবণের সঙ্গে যুদ্ধের আগে দুর্গার বোধন করেছিলেন দশরথ পুত্র রামচন্দ্র। এর পর দুর্গার আরাধনা করে শক্তি ও সৌভাগ্যের প্রার্থনা করেন তিনি। অকালে দুর্গাকে জাগিয়ে তোলা হয়েছিল বলেই একে অকাল বোধন বলা হয়ে থাকে।