মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: সরকারি নির্দেশনা পেয়েই কয়েকদিন ধরে ঝারা মোছা চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে। শ্রেণীকক্ষ পরিষ্কারের পর অনেকের চলছে প্রতিষ্ঠানের আঙিনার ঝোঁপ ঝাড় বাগান পরিষ্কারের কাজ। দেড় বছরের বেশী সময় ধরে শরীরচর্চা ও খেলাধূলা না হওয়ায় মাঠগুলো অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সেখানেও চলছে কর্মযজ্ঞ। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে চলছে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ার ব্যবস্থাপনা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে মৌলভীবাজারের স্কুল কলেজগুলোতে তোড়জোড় শেষ মুহুর্তে। সময়ের আগেই প্রস্তুতি সেরে নিতে শুক্রবার ছুটির দিনেও শিক্ষা প্রতিষ্টান খুলা রাখবেন অনেকেই।
মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, করোনা সংক্রমণের কারণে গত বছর ১৮ মার্চ থেকে সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়।
এরপর অন লাইনে পাঠদান শুরু হলেও সারাদেশে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী নানা কারণে অনলাইনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। মাঝে কয়েক দফা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নিয়ে করোনা সংক্রমণ না কমার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্টান খোলা সম্ভব হয়নি। তবে এখন করোনা সংক্রমণ কমার কারণে অতি সম্প্রতি সরকারি সিদ্ধান্তে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তবে কিভাবে শ্রেণি ভিত্তিক পাঠদান করতে হবে তারও নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই আগামী ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই শিক্ষা উপযোগী করতে হবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পক্ষ থেকে।
স্কুল খুলার খবরে খুশী শিক্ষার্থী অবিভাবকরা ও শিক্ষকরা। এস্যাইমেন্ট জমা দিতে এসে জানালেন সেই অনূভূতির কথা। হাফিজা খাতুন বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমাইয়া বলেন, অনেক ভালই লাগতেছে।
অনেকদিন পর আমরা স্কুলে এসে পড়ব। বাসায় সব এতদিন আমরা ছিলাম, পড়ালেখা করেছি। কিন্তু স্কুলে স্যার ম্যাডামরা ভাল ভাবে পড়ান। স্কুলে আসার খবরে আমাদের অনুভূতিটা খুব ভাল ফিল হচ্ছে।
সানজিদা বলেন, অনেকদিন পর স্কুল খুলছে। আমরা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে আসব এবং পড়াশোনা করবো ভালভাবে। অন্যকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে উৎসাহিত করবো। স্কুলে পড়াশোনা করতে যে মজা ঘরে বসে সেই মজা নেই।
অভিভাবক কয়েছ উদ্দিন বলেন, প্রায় ১৮ মাস পরে স্কুল কলেজ খুলছে।
আমার মেয়ে স্কুলে পড়ে। আরো পরিচর্যার প্রয়োজন আছে। স্কুল খুলায় আমি আনন্দিত। তবে স্কুল খুলে কিভাবে পরিচালনা করবেন, সেটা দেখার বিষয়। হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মাধূরী মজুমদার বলেন, শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে ভয়ে উঠবে আমদের এই প্রিয় শিক্ষাঙ্গন। আমাদের প্রতিষ্ঠান আবার উজ্জিবিত হবে। প্রাণ ফিরে পাবে। আমরা সকল শিক্ষকরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তপতি দাশ বলেন, হয়ত সম্পূর্ণ পোষানো যাবে না, তারপরও আমরা সব শিক্ষকরা চেষ্টা করবো ক্ষতি পোষিয়ে দেয়ার জন্য। তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণীকক্ষে তাদের পাঠদান করা। তারা যেন ভালভাবে স্কুলে আসা থেকে যাওয়া পর্যন্ত তাদের স্বাস্থ্য বিধি যাতে অব্যাহত থাকে আমরা সেই বিষয়ে নজর দিব।
সরকারি ঘোষণার পর থেকেই মৌলভীবাজারের প্রাথমিক পর্যায়ের ২ হাজার ৮৪টি ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ২১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোলার প্রস্তুতি শেষের দিকে। সময় যত ঘনিয়ে আসছে আসবাবপত্র তৈরী কিংবা মেরামতের কাজ এগিয়ে চলছে। কেবল মহামারি করোনা নয়, ডেঙ্গু জ্বর নিয়েও সর্তক অবস্থানে কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দেয়া হচ্ছে সেই নির্দশনা।
মৌলভীবাজারের দি ফ্লাওয়ার্স কেজি এন্ড হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ঘোষণা মোতাবেকে ধোয়া মোছা ও পরিষ্কারের কাজ শেষের দিকে। আমরা হাত ধূয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি।
সেখানে সাবান ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকবে। আমাদের স্কুলে যদিও একটি প্রবেশ পথ, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ছেলে ও মেয়ে পৃথকভাবে প্রবেশ করতে পারে সেরকম ব্যবস্থা করব। একটি আইসোলেশন কক্ষ থাকবে। প্রতি তালায় ছেলে ও মেয়েদের জন্য নয়টি নয়টি করে বাথরুমের ব্যবস্থা রয়েছে।
হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগম বলেন,আমাদের বাচ্চাগুলো আবার তাদের বাগানে চলে আসবে। তাদের পরিবেশে চলে আসবে তারা। তাদের পরিবেশমত মানুষ হবে। তাদের যে পড়াশোনার সুযোগ দেয়া হবে সেটাও যেন তারা উৎফুল্ল থাকে সে জন্য আমরা আশাবাদি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অফিসার মো. ফজলুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা জানার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। সমস্যা থাকলে সমাধান করে পাঠদানের উপযোগী করা হবে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, সংশ্লীষ্টদের নিয়ে আমরা বসে প্রয়োজনীয় ব্যস্থাপনা শেষ করেছি। ৯ তারিখ পর্যন্ত প্রস্তুতির একটি সময়সীমা মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়েছে। ১০ ও ১১ তারিখ পরিদর্শন করা হবে। আমার আমাদের পক্ষ থেকে শহর অঞ্চলের কয়েকটি স্কুল পরিদর্শন করেছি। পাশাপশি মূল চ্যালেঞ্জ যেটি গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলো দীর্ঘদিন পরে যেহেতু খুলবে সেগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত করানো যায় এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে শিক্ষার্থীদের উপযোগী করা যায় সে ব্যাপারে আমরা ইউএনও এবং শিক্ষা কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি।