বিশেষ প্রতিনিধি: যশোরের ঝিকরগাছায় শারীরিক নির্যাতনকারী ও যৌতুক লোভী স্বামীকে তালাক দিয়ে ক্ষিপ্ত তালাক প্রাপ্ত স্বামী তসলিম উদ্দিন মজনু ও আমিন ঘোষ গং এর হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তার তালাক দানকারী স্ত্রী শম্পা সহ তার গোটা পরিবার। বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মজনু-আমিন ঘোষ গং এর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেকে রেহাই পাচ্ছে না শম্পা ও তার পরিবার।
একের পর এক গালমন্দ সহ যেকোন সময় বড় ধরনের একনকি প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে এই সন্ত্রাসী বাহিনী। এতে করে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শম্পা ও তার পরিবার। তারা আশংকা করছে যেকোন মুহূর্তে এই সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের উপর কঠোর আক্রমণ করতে পারে।
তালাক দানকারী শম্পা যশোরের নতুনহাট এলাকার আলমগীর কবিরের মেয়ে।
শারীরিক নির্যাতনকারী ও যৌতুক লোভী স্বামী তসলিম উদ্দিন মজনু মনিরামপুর থানার ছোট সালামতপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে এবং সন্ত্রাসী রুহুল আমিন ঘোষ যশোরের নতুন বড় মেঘলা গ্রামের মৃতঃ মোনো এর ছেলে।
নির্যাতিতা শম্পা জানান, ২০১৮ সালে দেখতে এসে মজনুর সাথে তার বিয়ে হয়। ঘটকের মাধ্যমে তার স্বামীর বাড়ির লোকজন তাকে দেখতে এসেই জোরাজুরি করে, পরবর্তীতে দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের ওইদিন রাতেই বিয়ে হয়। সব জেনেশুনে মজনু তার পরিবারের উপস্থিতিতে আমাকে বিয়ে করে আমার বাবার বাড়িতে বিয়ের রাতে আমাকে নিয়ে ওঠে।
মজনু ও তার পরিবার বলে, তিন মাসের মধ্যে আয়োজন করে সবাইকে দাওয়াত দিয়ে অনুষ্ঠান করে আমাকে আমার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যাবে। কিন্তু আজ চার বছর পেরিয়ে গেলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে আমাকে কোনদিনই তার বাড়িতে নিয়ে যায়নি। আর নিয়ে যাওয়ার কথা বললেই চলতো আমাকে আমার বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ি ফেলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ শারীরিক-মানুষিক নির্যাতন।
যা দুই-একদিন সে আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল, তাতে সেখানে গেলে আমার শাশুড়ি ও ননদরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতো। আর আমার বাড়ি থেকে আত্মীয় স্বজনরা গেলে আত্মীয় স্বজনসহ আমাকে উল্টাপাল্টা কথা বলতো।
মজনুকে এ কথা বললে সে বলতো আমার ঘর জামাই থাকার কথা ছিল তোমার পরিবারের সাথে। এর মাঝে আমাদের ঘরে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সে সেই সন্তান সহ আমাকে কোন খরচ-খরচা দিতো না, সবই আমার পিতা বহন করতো। আমি একটু শারীরিক ভাবে অসুস্থ ছিলাম, আমাকে ভারতে চিকিৎসা করাতে যেতে হতো।
সে খরচও সে দিতো না, আমার বাবাই সব বহন করতো। মাঝে মাঝে সে আমার বাসা থেকে টাকা পয়সাও চুরি করতো। তাই নিয়ে বলতে গেলে সে আমাকে মারধর করতো। পরবর্তীতে আমার মেয়ের বয়স যখন দেড় বছর বয়স হয়, তখন মজনু আমার বাবার দোকান থেকে টাকা চুরি করে বাড়ি থেকে চলে যায়। চলে যাওয়ার আজ এক বছর যাবত সে আমার ও সন্তানের কোন খোঁজ খবর, এমনকি কোন প্রকার খরচও দেয়নি। আমি যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।
পরবর্তীতে আমি অশান্তির কথা চিন্তা করে, কোন ঝুট-ঝামেলায় না গিয়ে মজনুকে আইন সম্মত ভাবে তালাক প্রদান করি। এতে মজনু ক্ষিপ্ত হয়ে তার ভাড়া করা সন্ত্রাসী আমিন ঘোষকে নিয়ে আমি ও আমার পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে একাধিক বার হুমকি প্রদান করে আসছে। এতে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
নির্যাতিতা শম্পার পিতা আলম বলেন, আমি ঝিকরগাছা বাজারে ছোট খাটো একটা ছিট কাপড়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা করি। আমার ছোট মেয়ে শম্পার বিয়ে হওয়ার পর ওইদিন থেকেই মজনু ঘর জামাই থাকা শুরু করে। বলে তিন মাস পর উঠিয়ে নিয়ে যাবো। কিন্তু তিন মাস পর উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে, সেই যে মজনু ঘর জামাই থাকা শুরু করে, আজ চার বছরেও সে আর আমার মেয়েকে তার বাড়ি নিয়ে যায়নি। আমার বাড়িতে থাকার সুবাদে সে আমার সাথে আমার দোকানে ব্যবসা করতে লাগে। এর মাঝে তাদের এক কন্যা সন্তান জন্ম হয়।
আমি আমার জামাই, মেয়ে ও নাতনীর সব খরচ বহন করি। তারপরও দেখি প্রায় প্রায় মজনু আমার মেয়েকে মারধর করে। এর মাঝে আমি মজনুর চাকরি জন্য নগদ দুই লাখ টাকা সুদ করে এনে দিই, সংসারে অশান্তির ভয়ে।
তারপর তার মোটরসাইকেলের জন্য দৈনিক দুইশ টাকা করে তেল কেনার জন্য দেয়। সে আমার শালার দোকান থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা বাকিতে কেনাকাটা করে। মজনু তার গ্রামের মানুষ সহ আত্মীয় স্বজনকে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ছিট কাপড় বাকি দিয়ে, আমাকে না জানিয়ে সে টাকা উঠিয়ে খেয়ে ফেলে। তাও আমি সব মুখ বুঝে সহ্য করি। কিন্তু করনোর সময় সে, আমি দোকানে না গেলে কৌশলে কয়েক দফায় ৩ লাখ টাকা চুরি করে। পরবর্তীতে আমার মেয়ের সাথে ঝগড়াঝাটি করলে, আমি মজনুকে উক্ত টাকার কথা জিজ্ঞেস করি। সে আমাকে কোন জবাব দেয়নি।
পরে, সে আমার মেয়ে ও নাতনীকে রেখে কোথায় চলে যায়। আজ এক বছর যাবত কাউকে কোন খোঁজ খবর নেয়নি। এমনকি কোন প্রকার আমাদের সাথে ও আমাদের আত্মীয় স্বজনদের সাথেও যোগাযোগ করেনি। এক বছর পরে এসে মজনু বিভিন্ন মারফত টাকা দাবি করে। এতে আমার মেয়ে অশান্তির ভয়ে তাকে তালাক দেয়। পরে, মজনু ক্ষিপ্ত হয়ে সে তার ভাড়াটে সন্ত্রাসী আমিন ঘোষকে নিয়ে আমার কাছে টাকা পয়সা চায় এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
সূত্রে জানা যায়, নির্যাতনকারী ও যৌতুক লোভী মজনু ও তার পরিবার এলাকায় অসামাজিক কর্মকান্ড সহ যখন তখন যার তার সাথে খারাপ ব্যবহারে লিপ্ত থাকতো। এমনকি তার চাচা কিংবা অন্য কোন আত্মীয় স্বজনদের সাথেও তাদের কোন ভালো সম্পর্ক নেই। এমনকি প্রতিবেশীদের সাথেও তাদের সম্পর্ক ছিন্ন। এলাকায় তারা একঘরে হিসাবে পরিচিত।
আমিন ঘোষ বলেন, আমরা সবাই আত্মীয়। আমি শুধু মাত্র ঘটনাটি শুনতে যাই। আমাকে জড়িয়ে যা বলা হচ্ছে তা সত্য না।
তসলিম উদ্দিন মজনু বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা। বলে কলটি কেটে দেন মজনু।
এ রির্পোট লেখার আগ পর্যন্ত মামলার প্রস্তুতি চলছিল।