রাজশাহী ব্যুরো: বাঘা ‘ক’শ্রেণীর পৌরসভার প্রয়োজনীয় জনবল ১৩২জন।এর মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত আছে ১৮ জন। আর অস্থায়ী কর্মী আছেন ১২জন। পৌরসভার নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও মালি ছাড়া অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের বিধান নেই বলে জানা গেছে। জনবল বাড়ানোর জন্য ১০টি পদে কয়েকবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও সেই নিয়োগ দিতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ।
সর্বশেষ গত শুক্রবার (২৯-১০-২০২১) নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া হলেও বাঘা পৌর সভার বর্তমান মেয়রের বিরুদ্ধে একজন কাউন্সিলরের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগ সমূহের তদন্ত কার্যক্রম সমাপ্তসহ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০ শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ খিষ্টাব্দ তারিখের ১৮৯ নম্বর স্বারকে প্রদত্ত ছাড়পত্রে বাঘা পৌরসভার নিয়োগের কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশক্রমে স্থগিত আদেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের, স্থানীয় সরকার.পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন।
২৮ অক্টোবর উপসচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেনের স্বাক্ষরিত পত্রে, বাঘা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলামের আবেদন ও বিভিন্ন সুত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কর্মচারি নিয়োগে অনিয়মসহ বাঘা পৌরসভা সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক মতামত দাখিলের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোঃ আবু জাফর রিপনকে তদন্তকারি কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী নিয়োগ স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসকসহ সংশ্নিষ্ট সব দপ্তরে পত্র দেওয়া হয়েছে।
গত ১১ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর বাঘা পৌর সভার বর্তমান মেয়রের সীমাহীন দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যে বন্ধকরণ প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে লিখিত আবেদন করেন বাঘা পৌরসভার কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম।
সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, পৌরসভায় বর্তমানে ১৮ জন স্থায়ী ও ১২ জন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। পৌর তহবিলে টাকা না থাকায় ৬ মাস ধরে তাদের বেতন-ভাতা হচ্ছে না। যেখানে পৌরসভার বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অর্থাভাবে নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না, সেখানে আরও ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন পৌর মেয়র।
পৌরসভার মাসিক সভাতেও কর্মী নিয়োগের বিষয়টি পাস করার প্রয়োজন মনে করেননি। এছাড়া গত এক বছর পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিলেও কোনো টাকা জমা হয়নি। টাকা না থাকায় মাসের পর মাস বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না পৌর কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা কর্মচারিরা। পৌরসভার আর্থিক সঙ্কুলান না থাকার পরও মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ওই নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এতে প্রকৃত মেধাবীদের চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাঘা পৌরসভার মেয়র আব্দুর রাজ্জাক (২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি) দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বেপরোয়াভাবে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে চলেছেন। তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করায় তাকে ১১ মাসের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়নি। তার ওয়ার্ড এলাকায় সব ধরনের উন্নয়ন বরাদ্দ ও সেবা কার্যক্রম বন্ধ
রাখা হয়েছে।
এছাড়াও, পৌরসভার হাট-বাজার ইজারা বাবদ আহরিত ১ কোটি ২০ লাখ টাকা, পৌর মার্কেট নির্মাণে টেন্ডারপত্র বিক্রি বাবদ পাওয়া ৯৬ লাখ টাকা পৌরসভার তহবিলে জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন মেয়র।এসব খাতের ভ্যাট ও আয়কর বাবদ টাকাও সরকারি রাজস্ব খাতে জমা করেননি। পৌর এলাকায় সৌন্দর্য বর্ধনের নামে ১৫ লাখ টাকা পৌর তহবিল থেকে উত্তোলন ও ব্যয় দেখানো হলেও কোথাও কোনো কাজ করা হয়নি।
একইভাবে জন্মনিবন্ধন থেকে পাওয়া অর্থের একটি অংশ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা করার নিয়ম থাকলেও এক টাকাও জমা দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন সাইফুল ইসলাম। মেয়রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে কমিশন আদায়ের অভিযোগ এনে সাইফুল ইসলাম তার অভিযোগে বলেন, এসব কারণে ঠিকাদাররা অবকাঠামো উন্নয়নে নিম্নমানের ও দায়সারা গোছের কাজ করেছেন,যা সরেজমিন তদন্ত করলেই সত্যতা পাওয়া যাবে।
মেয়র আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ওপর মন্ত্রণালয়ের সাময়িক স্থগিতাদেশ ছিল। তবে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে কোন কথা বলেননি।এদিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ওপর মন্ত্রণালয়ের স্থগিত আদেশের পর গত রোববার ৩১ অক্টোবর ২০২১ পৌরসভার কাউন্সিলর ও কর্মচারিদের বেতন-ভাতাদি দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন জানান, চলতি মাস বাদে তাদের ৩ মাসের
বেতন-ভাতাদি পেয়েছেন।
অভিযোগকারি কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম জানান,তাকে বেতন-ভাতার জন্য ডাকা হয়নি। পৌরসভার প্রধান হিসাবরক্ষক হাসান আলী জানান,
চলতি মাস বাদে ১৮ জন কর্মকর্তা- কর্মচারি তাদের ৪ মাসেরবেতন-ভাতাদি পেয়েছেন। আর অস্থায়ী ১২জনকে জুলাই মাসের বেতন-ভাতাদি দেওয়া হয়েছে।