বিশেষ প্রতিনিধি: আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংগঠনিকভাবে বহিষ্কারের মতো কঠোর সীদ্ধান্ত নেওয়ার পরও শার্শা উপজেলায় স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা দমছে না। চলমান ইউপি নির্বাচনের প্রতিটি ইউনিয়নেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন দলের মনোনীত প্রার্থীদের।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদকে সামনে রেখে চারিদিকে চলছে নির্বাচনী ডামাডোল। চলছে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা। যে যার মত নিজেকে ফুলের মত দাবী করে ভোটারদের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করছে। অথচ নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার শুরুতেই অনেকে নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে প্রতারণা করেছে নিজ দলের সাথে। এসব বিদ্রোহী প্রার্থীগণ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেও স্ব স্ব এলাকায় আওয়ামীলীগের নেতা হিসেবে পরিচিত ছিল।
দলীয় নির্দেশ অমান্য করে যে যার মত নৌকা প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেকেই বর্তমানে চেয়ারম্যানের আসনে আসীন আছেন। আর জনপ্রিয়তার দিক দিয়েও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীরা
অনেক এগিয়ে আছেন বলে মত প্রকাশ করেন স্থানীয় ইউনিয়ন বাসীরা।
তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শার্শা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মনোনায়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪৩ জন প্রার্থী। এছাড়া ৯০টি সাধারণ মেম্বার পদে ৪৫১ জন এবং ৩০টি সংরক্ষিত নারী আসনে ৯৭ জন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
আসন্ন নির্বাচনে উপজেলায় দলীয় নমিনেশন পান, ডিহির আসাদুজ্জামান, লক্ষণপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ারা খাতুন, বাহাদুরপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, পুটখালীর সাবেক চেয়ারম্যান আঃ গফফার সরদার, গোগার বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ, বাগআঁচড়ার বর্তমান চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল, কায়বার বর্তমান চেয়ারম্যান হাসান ফিরোজ আহমেদ টিংকু, উলশীর রফিকুল ইসলাম, শার্শার কবির উদ্দীন আহম্মদ তোতা ও নিজামপুরের আব্দুল ওহাব।
আর বিদ্রোহী প্রার্থীদের তালিকায় আছেন, উপজেলার ডিহি ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান হোসেন আলীসহ ১০ জন প্রার্থী।
লক্ষণপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা শামছুর রহমানসহ তিনজন।
বাহাদুরপুর ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাঃ সম্পাদক মফিজুর রহমানসহ তিনজন।
পুটখালী ইউনিয়নে নাসির উদ্দিন। গোগা ইউনিয়নে তবিবর রহমানসহ দুইজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
কায়বা ইউনিয়নে আলতাফ হোসেনসহ তিনজন।
বাগআঁচড়া ইউনিয়নে আব্দুল খালেকসহ চারজন বিদ্রোহী প্রার্থী।
উলাশী ইউনিয়নেআয়নাল হকসহ তিনজন।
শার্শা সদর ইউনিয়নে নৌকা সোহরাব হোসেনসহ দুইজন।
নিজামপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম রেজা বিপুলসহ ছয়জন।
পুটখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী আব্দুল গফফার সরদার বলেন, আমাদের আজ বিএনপি জামাতের সঙ্গে নির্বাচনের প্রতিযোগিতা নেই। আমাদের একজন শীর্ষ নেতা আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৌকাকে তিনি অবমাননা করছেন। এভাবে চলতে থাকলে আমরা বসে থাকবো না। আমরা এসব নেতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবো। এসব নেতাদের আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।
বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাঃ সম্পাদকনবিদ্রোহী প্রার্থী মফিজুর রহমান বলেন, আমার দূর্ভাগ্য গত নির্বাচনেও আমি নৌকা প্রতীক পাইনি। মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বর্তমান চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে নৌকা প্রতীক পাইয়ে দেন। এবারও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাঃ সম্পাদক হিসাবে আমি নৌকা প্রতীক আশা করেছিলাম। কিন্তু পাইনি। আজ গোটা ইউনিয়নের নেতা কর্মিরা আমার সাথে আছে। তাদের সাথে সুসংগঠিত হয়ে আমি আবারও এ ইউনিয়ন থেকে নির্বাচন করছি। আমি আশা করি সকলের ভালোবাসায় আমি এবার নির্বাচনে জয়লাভ করবো।
কায়বার আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান হাসান ফিরোজ আহমেদ টিংকু বলেন, কায়বা ইউনিয়ন একটি মডেল ইউনিয়ন। আমি এই ইউনিয়নের ৭৫% উন্নয়ন করেছি। বাকি যেটুকু আছে, আমি পূণরায় নির্বাচিত হলে সে উন্নয়নটুকুও করবো।
এবারে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া পুটখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হাদিউজ্জামান বলেন, আমরা নৌকার বিপক্ষে নই। আমরা সাবেক চেয়ারম্যান গফফার সরদারের বিপক্ষে। এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলাম আমি। আমি কোনো বিরোধিতা না করে নির্বাচন থেকে সরে এসেছি। আমি চাই এ ইউনিয়নে তরুণ নেতা নাসির উদ্দিন চেয়ারম্যান হোক। আমরা সন্ত্রাসে বিশ্বাসী নই। আমরা কোনো অপরাজনীতিকে প্রশ্রয় দিতে রাজি নই। যারা এর আগে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছে আমরা শুধু তারই বিপক্ষে।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন বলেন, নৌকা প্রতীক যেখানে, আমি আছি সেখানে। জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকার মাঝি হিসেবে ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন আমরা তাকে বিজয়ী করবো। কোনো ভাবেই আমরা নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেবো না। আর যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তাদেরও শুভবুদ্ধি উদয় হবে বলে আমি আশা করি। সকলে মিলে নৌকার মাঝিকে বিজয়ী করবে এই আশা রাখি।