আশাশুনি প্রতিনিধি: আশাশুনি উপজেলার ভাতাভোগিদের মোবাইল একাউন্টে টাকা পাঠানোর নামে বঞ্চনার ঘটনা উপজেলাব্যাপী সমালোচনা ঝড় তুলেছে। বঞ্চনার শিকার ভাতাভোগিরা টাকা না পেয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসসহ দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফিরলেও কোন সদুত্তর বা প্রতিকার না পেয়ে চরম মনকষ্টে দিন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন তারা। সরকার ভাতাভোগিদের হয়রানী ও টাকা লেনদেনে নানা প্রতারণা দূর করে প্রকৃত অসহায় ও যোগ্য ব্যক্তিদের হাতে সরাসরি টাকা পৌছানো নিশ্চিত করতে তাদের স্ব-স্ব মোবাইলে টাকা প্রেরণের মহৎ উদ্যোগ গ্রহন করেন। বিভিন্ন বিভাগের ভাতাভোগিদের তালিকা করার পাশাপাশি ভাতাভোগিদের নাম ও মোবাইল নম্বর তালিকাভুক্ত করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সমাজসেবা অফিস ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় কাজ সঠিকভাবে সম্পন্নের উদ্যোগ গ্রহন করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তারা ইউনিয়নে ইউনিয়নে কাজ করে ভাতাভোগিদের তালিকা ও মোবাইল নম্বর লিপিবদ্ধ ও কম্পিউটারাইজড করে সংরক্ষণ করেন। খসড়া তালিকা তৈরির পর তা ইউনিয়ন পরিষদে লটকানো ও পুনরায় সংশোধিত তালিকা কম্পিউটারাইজড শেষে চুড়ান্ত তালিকা করা হয়। এরপর ভাতাভোগিদের স্ব-স্ব নামে একাউন্ট খোলানো হয়। একাউন্ট খোলেন “নগদ” এর কর্মকর্তারা ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হয়ে। এরপর আবার ভাতাভোগীদের ফোন নম্বরে ফোন করে তা শিওর হওয়া হয়। পরবর্তীতে সেই একাউন্টে টাকা পাঠানো হয় বা হচ্ছে। কিন্তু সকল ইউনিয়নের ভাতাভোগিদের একটি বড় অংশের মোবাইলে টাকা পৌছায়নি। টাকা না পেয়ে ভাতাভোগিরা ইউনিয়ন পরিষদ ও সমাজসেবা অফিসে দৌড়ঝাপ শুরু করলে টাকা বিতরণে হযবরল অবস্থার চিত্র প্রকাশ হতে শুরু করে। খোঁজ নিয়ে দেখাগেছে, কারো কারো মোবাইল নম্বর তারটা না বসিয়ে অন্য কারো নম্বর বসানো হয়েছে। কারো কারো নম্বর ঠিক থাকলেও এখনো টাকা পৌছায়নি। আবার অফিস থেকে যে নাম্বারে টাকা পাঠানো হয়েছে সে নম্বর সরবরাহ করা হলে দেখাগেছে টাকা যাওয়া নম্বরটি দেশের অন্য কোন জেলার মানুষ ব্যবহার করছে। অনেক নম্বর বন্ধ ও পাওয়া গেছে। কারো টাকা দু’বার পাঠানো হলেও ভিন্ন ভিন্ন অন্য কারো নাম্বারে চলে গেছে। আবার কারও টাকা ফোনে ঢুকলেও অন্য কেউ হ্যাকিং এর মাধ্যমে সে টাকা তুলে নিয়েছে। এরকম শত শত ভাতাভোগি তাদের খুবই কাঙ্খিত ও অতি প্রয়োজনীয় ভাতার টাকা না পেয়ে হাপিত্তিশ করছেন। তারা এই টাকা তাদের সম্বল হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। এরকম নানা রকম হেরফের হয়ে টাকা ভিন্ন মানুষের হাতে চলে যাওয়ায় এসব অসহায় মানুষের টাকা ফেরৎ পাওয়ার কোন উপায় করা হচ্ছেনা। টাকা না পাওয়া ভাতাভোগীরা ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা, গ্রাম পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবা অফিস স্টাফ ও ‘নগদ’ এর স্টাফদের বিরুদ্ধে এ ভূলের জন্য ভিন্ন ভিন্নভাবে অভিযোগ তুলছেন। উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানাগেছে, আশাশুনি উপজেলায় বয়স্ক ভাতাভোগি ১৪ হাজার ৯২৩ জন, বিধবা ভাতাভোগি ৭ হাজার ২৮১ জন, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধি ৪ হাজার ৫০৪ জন ও অনগ্রহসর জনগোষ্টি ভাতাভোগি ৫৩ জন। এছাড়া প্রতিবন্ধি শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হয় ১৪১ জন ও অনগ্রহসর জনগোষ্ঠি শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হয় ৩৯ জনকে। ভাতার টাকা মার্চ-২০২১ পর্যন্ত ৯ মাসের ১ম কিস্তির টাকা ভাতাভোগিদের মোবাইলে পাঠানো হয়েছে। ২য় ও ৩য় কিস্তির টাকাও অনেককে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এপ্রিল থেকে জুন-২০২১ টাকা পাঠানোর জন্য পেরোল উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা সমাজসেবা অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, ভাতাভোগিদের ডাটাবেজ করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদে। ১১ ইউনিয়নে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা ডাটাবেজ লিপিবদ্ধ করেন। যতদূর জানাগেছে, উদ্যোক্তারা মোবাইল নম্বরের কোন কোন না ডিজিজ ভুল করায়, আবার কিছু গ্রাম পুলিশ ও ইউপি সদস্যরা ভাতাভোগির নম্বার না দিয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনের নম্বর দেওয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডাটাবেজ তৈরি, একাউন্ট খোলার কাজের সাথে সমাজসেবা অফিসের কোনরূপ সংশ্লিষ্টতা বা কোন ভূমিকা ছিলনা। তবে আমরা ৩১ জুলাই পর্যন্ত যে অভিযোগ পাব সেগুলো থানায় জিডি করে অধিদপ্তরকে অবহিত করবো। যাতে এব্যাপারে একটা সুরাহার ব্যবস্থা করা হয়।