নীলফামারী প্রতিনিধি: নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১২ এপ্রিল স্থানীয় শহীদ দিবস পালিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে সৈয়দপুর নিহত শহীদদের স্মরণে প্রতিবছর দিবসটি নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে পালিত হয়ে আসছে।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সকালে শহরের শহীদ জিকরুল হক সড়কের শহীদ স্মৃতি অম্লান চত্বরে জাতীয় ও সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে স্থানীয় শহীদ দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
পরে সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ, শহীদের সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ’৭১ সৈয়দপুর শাখা, সাংসদ রাবেয়া আলীমের পক্ষ থেকে শহীদ স্মৃতি অম্লানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এছাড়া পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করে প্রথমআলো বন্ধুসভা, শহীদ কুদরত স্মৃতি সংসদ, উদীচী শিল্পি গোষ্ঠিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সংগঠনগুলো।
এ সময় সংরক্ষিত আসনের সাংসদ রাবেয়া আলীম, আ’লীগ উপদেষ্টা আব্দুস সাত্তার, উপজেলা আওয়ামলীগের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদুজ্জামান রাশেদ, প্রজন্ম ’৭১ সৈয়দপুর শাখার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুর হোসেন, উপজেলা আওমীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রজন্ম ৭১ সৈয়দপুর সাংগঠনিক জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা সালাউদ্দিন বেগ, সাংবাদিক এম আর আলম ঝন্টুসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মসূচীর মধ্যে মসজিদ- মন্দির ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা সভা ও সন্ধ্যায় আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে শহরের আদিবা কনভেনশন হলে।
১২ এপ্রিল নীলফামারীর সৈয়দপুরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানীয় শহিদ দিবস। এদিনে তৎকালীন সাংসদ (এমপিএ) ডা. জিকরুল হক সহ দেড় শতাধিক মুক্তিপাগল মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী।
এর আগে তাঁদের সৈয়দপুর সেনানিবাসে কোয়ার্টার গর্ডে বন্দি রেখে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়। বন্দিদের রংপুর সেনানিবাস এলাকার নেসবেতগঞ্জে তাঁদের ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করা হয়। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে সৈয়দপুরের চার হাজার শহীদের স্মরণে দিবসটি পালন হয়ে আসছে।
প্রজম্ম’৭১ এর সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক বলেন, সারাদেশে সর্বাত্মত যুদ্ধের দুদিন আগে সৈয়দপুরে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়। ২৩ মার্চ শহরের সাহেবপাড়ায় বাঙালি রেলওয়ে কর্মকর্তা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করে পাকিস্তানিরা।
এরপর সারা শহরে হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে। অবরুদ্ধ বাঙালিদের উদ্ধারে পরদিন ২৪ মার্চ ছুটে আসেন দিনাজপুরের সাতনালা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মির্জা মাহতাব বেগ। তাঁর সাথে যোগ দেন শত শত গ্রামবাসী। তাদের হাতে ছিলো দুটি আগ্নেয়াস্ত্র সহ দা, কুড়াল, বটি ইত্যাদি। শহরে প্রবেশ মুখে বাঁশবাড়ি এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে তিনি শহীদ হন। তাঁর ছিন্ন মস্তক হাতে নিয়ে উল্লাস করতে থাকেন স্থানীয় অবাঙ্গালি ও পাকিস্তানি বাহিনীরা।
মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠনিত করতে থাকা তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ডা. জিকরুল হককে ২৫ মার্চ রাতে বন্দি করা হয়। এরপর একে একে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হন সৈয়দপুর থানা আওয়ামীলীগৈর সভাপতি ডা. শামসুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা ডা. বদিউজ্জামান, ন্যাপ সভাপতি ডা. এস. এম ইয়াকুব, শিল্পপতি তুলশিরাম আগরওয়ালা, রামেশ্বর লাল আগরওয়ালা, যমুনা প্রসাদ কেডিয়া, রেলওয়ে কর্মকর্তা মো. আয়েজ উদ্দিনসহ বিভিন্ন পোশার মানুষকে বন্দি করে সেনানিবাসে বন্দি সেলে নেওয়া হয় (কোয়ার্টার গার্ড)। এসব নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের রংপুরের নেসবেতগঞ্জে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সৈয়দপুরের মানুষ প্রতিবছর দিবসটি শ্রদ্ধার সাথে পালন করে থাকেন।