বিশেষ প্রতিনিধি: জন্মনিবন্ধন সংশোধনে ব্যাপক জন ভোগান্তির অভিযোগ উঠেছে। জন্মনিবন্ধন সংশোধনের নামে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদগুলো ইচ্ছেমতো টাকাও নিচ্ছে। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের সচিবরা জন্মনিবন্ধন সংশোধনে ‘উপরে টাকা লাগবে’ দোহাই দিয়ে যা খুশি ফি নিচ্ছেন। এ বিষয় উপজেলা প্রশাসন কড়া হুঁশিয়ারি দিলেও ভোগান্তি কমেনি একটুও।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জন্মনিবন্ধনে নাম সংশোধনে ৫০ টাকা, জন্ম সাল-তারিখ সংশোধনে ১০০ টাকার সাথে ২০ টাকা কোর্ট ফি দিয়ে আবেদন করতে হবে। তবে উদ্যোক্তাকে অতিরিক্ত ২০-৫০ টাকা দিতে উপজেলা প্রশাসন থেকে অলিখিতভাবে বলা আছে।
কিন্তু জন্মনিবন্ধন সংশোধনে ১০০ টাকা ফি নেয়ার পরিবর্তে ‘উপরে টাকা লাগবে’ দোহাই দিয়ে তিন হাজার টাকা নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে টাকা নেয়ার ঘটনা ইউএনও এবং সাংবাদিকদের না জানানোর জন্য শর্তও দেয়া হয়েছে।
অনেকে আবার দিনের পর দিন ইউনিয়ন পরিষদে হেঁটেও জন্মনিবন্ধন সংশোধন না করতে পেরে হতাশা প্রকাশ করেছেন উপজেলার বারবাকপুর গ্রামের শিল্পী খাতুন জানান, তার জন্ম তারিখ ও পিতার নামের বানান ভুল ছিলো। সংশোধনের জন্য গদখালী ইউনিয়ন পরিষদে গেলে তার কাছ থেকে ৭০০ টাকা নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ডিজিটালের কথা বলে আরো ১৫০ টাকা নেয়া হয়েছে।
মল্লিকপুর গ্রামের কলেজপড়ুয়া তাহসিন রেজা আপন নাম সংশোধনের জন্য ঝিকরগাছা ইউনিয়ন পরিষদে গেলে ফি বাবদ তাঁর কাছ থেকে ৪০০ টাকা নেয়া হয়েছে বলে জানান।
একই গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে রাকিব হাসান রাফি বলেন, জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য ঝিকরগাছা ইউপিতে গেলে উদ্যোক্তা আবু রাসেল তিন হাজার টাকা চুক্তি করেন। পরে তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর অপারগতা প্রকাশ করেন।
ঝিকরগাছায় ঘাস ক্ষেতের আইলে গরু খামারির লাশ
বল্লা গ্রামের আঞ্জু আরা খাতুন বলেন, ছেলে মিনহাজ উদ্দীন তাসমিনের জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে নির্বাসখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোখলেসুর রহমান তিন হাজার টাকা নিয়েছেন। বিষয়টি পরিষদের চেয়ারম্যানও জানেন বলে দাবি করেন তিনি।
রঘুনাথনগর মহাবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান তানভির বলেন, জন্মতারিখ সংশোধনের আবেদনের পর নির্বাসখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোখলেসুর রহমান তিন হাজার টাকা চেয়েছেন।
এ বিষয় নির্বাসখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে সরকারি ফি’র সঙ্গে সার্ভিস চার্জ নেওয়া হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
ঝিকরগাছা ইউপি চেয়ারম্যান আমির হোসেন বলেন, জন্মনিবন্ধন সংশোধনে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে সরকারি ফি’র বাইরে সচিবের অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। এরপর কেউ জন্মনিবন্ধন সংশোধনে কোনো ছলচাতুরি করে অতিরিক্ত টাকা নিলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।