বিশেষ প্রতিনিধি: বিয়ের সম্বন্ধ পাকা হয়েছে এই তো মাস দেড়েক হলো। এরই মধ্যে লকডাউন। দুই বাড়ি থেকেই আবার বিয়ের আগে বেশি দেখা – সাক্ষাৎ পছন্দ করেনা। তাই বিয়ের দিনও ঠিক হয়েছিল তাড়াতাড়ি, কিন্তু লকডাউন থমকে রাখলো সব।
অভীক আর প্রিয়া। না আগে কখনো প্রেমটেম করেনি, দুজনেরই নাকি ইচ্ছে ছিলো বাড়ি থেকে যার সাথে বিয়ে দেবে, সেই বিশেষ মানুষকেই নিজের মন দান করবে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে মানছে না তাদের মন। এতো দিন ধরে মনে মনে কাঙ্খিত মানুষকে নিয়ে জমানো স্বপ্নগুলো বাস্তবায়িত করতে চায় দুজনই। স্বপ্ন, আসলে সংসারের স্বপ্ন; টক – মিষ্টি – ঝাল খুনসুটির স্বপ্ন তাদের, আর অপেক্ষা বাস্তবায়নের।
একদিন প্রিয়ার সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে অভীক বলে উঠলো, না এভাবে আর পারা যাচ্ছে না, সেই কবে তোমায় দেখেছি প্রিয়া। হলুদ একটা শাড়ি পরে মুখটা নিচু করে সামনে বসেছিলে। দুহাতে লাল চুড়ি, লাল নেইলপলিশ। “প্রিয়া এসব শুনতে শুনতেই বললো আমাকে কেউ হয়তো ডাকছে, একটু ধরো ফোনটা আমি আসছি এখুনি। “প্রিয়া ফিরে এসে হ্যালো বলতেই অভীক আবার বলতে শুরু করলো – “একবার দেখা করোনা প্রিয়া।” প্রিয়ার ও সেই একই ইচ্ছে,কিন্তু কীভাবে এসব সম্ভব হবে সে ভেবে পাচ্ছিল না। ফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে তো দেখা হয় দুজনেরই, কিন্তু সদ্য সদ্য শুরু হওয়া পূর্বরাগ ভিডিও কলিংয়ে পূর্ণ হয় না।
এরপর আরো কিছু দিন গেলো। একদিকে অভীক আর অন্য দিকে প্রিয়া, দুজনেই ভাবছিল কীভাবে দেখা করা যায়। অবশেষে প্রিয়া বান্ধবীদের বাড়িতে যাওয়ার অজুহাতে একটা দিন বেরোলো, আর অভীকও বেরোলো কাজের অজুহাতে। কিন্তু দুজনের বাড়ি এতটাই দূরে ছিল যে তাদের দেখা করার জন্য মাত্র একঘন্টা সময়ই হাতে ছিল।
প্রিয়ার খুব ভয় করছিল এভাবে লুকিয়ে দেখা করতে যেতে।একবারই সামনে থেকে দেখেছে সে অভীককে, সেই যখন বিয়ের সম্বন্ধ হচ্ছিল আর তারপর শুধুই ফোনে কথা। একটু ভয় করছিল তার আর একটু লজ্জাও, আগে কখনোই বাড়িতে লুকিয়ে কিছু করেনি সে। অবশেষে দেখা হলো তাদের। অভীক পিছন থেকে আটকে ধরলো প্রিয়ার চোখ। দুজন দুজনকে সামনে থেকে দেখে লজ্জা পেলো খুব। তারপর অভীক আলতো করে প্রিয়ার একটা হাত ধরে নিল নিজের হাতের মধ্যে, প্রিয়ার পছন্দের ক্যাটবেরি আনতে ভোলেনি সে। এভাবে লুকিয়ে দেখা করার মধ্যে একটা মজা আছে , ভয়ও। সবটা মিলে একটা অনন্য অনুভূতি হচ্ছিল তাদের। কিন্তু হাতে সময় যে বড্ড কম।
কোথায় যাবে ঠিক করতে পারছিল না তারা। অভীক রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে প্রিয়াকে চোখ বন্ধ করতে বললো। প্রিয়া চোখ বন্ধ করতেই প্রিয়ার কপালে একটা টিপ পড়িয়ে দিল , হাতে পরালো লাল চুড়ি আর প্রিয়ার ওড়নাটা মাথায় দিয়ে দিল। রাস্তার পাশের দোকান থেকে আগেই কিনেছিল অভীক। প্রিয়ার মাথায় ওড়না দিয়ে অভীক বললো – “এইবার মনে হচ্ছে আমার বউ।
“প্রিয়া লজ্জা পেয়ে মুচকি হেসেই অভীকের হাতে আলতো করে মারলো। বললো – “খুব সাহস হয়েছে না তোমার, রাস্তার মধ্যেই এসব করছো, আমার হবুটা যে এতো রোমান্টিক জানতাম না তো। তারপর তারা একসাথে গেলো ফুচকার দোকানে। দুজন দুজনকে নিজেদের থেকে জল-ফুচকা খাইয়ে দিল, অন্যদের থেকে লুকিয়ে। তারপর অনেকটা পথ তারা দুজনের হাত ধরে হাঁটলো।
হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল এভাবেই তো হাঁটতে চায় তারা দুজন দুজনের হাত ধরে সারা জীবন, সুখে দুঃখে এভাবেই যেনো দুজনের হাত শক্ত করে ধরে রাখতে পারে। প্রার্থনা করছিল নিঃশব্দে ঈশ্বরের আশীর্বাদ। কি ভীষণ অদ্ভুত এক ভালোলাগা, একটা শান্তি আবিষ্ট করে রাখছিল তাদের এই মুহূর্তটাকে। আগামী দিন গুলো শুভ হোক তাদের।
কলমে -সুপ্রিয়াদত্ত(প্রহেলিকা)
আর্ট – বিপাসা