বিশেষ প্রতিনিধি: সন্ধ্যা হতে না হতেই দেবী দুর্গাকে ঘিরে ভিড়। ধূপের ঘ্রাণ, ঢাকের বাদ্য আর উলুধ্বনিতে মুখরিত পূজামণ্ডপ। দিনভর বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে ঘুরে দেবীকে প্রাণভরে দেখে নিল ভক্তরা। সবার চোখে মুখে বিষাদের ছায়া। বাজল দেবী দুর্গার বিদায়ের সুর। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে বৃহস্পতিবার শেষ হলো মহানবমী পূজা। এ দিনই দুর্গাপূজার অন্তিম দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ পরের দিন কেবল বিসর্জনের পর্ব। এদিন ভক্তদের কাঁদিয়ে কৈলাশে ফিরে যাবেন দেবী দুর্গা।
আজ শুক্রবার শুভ বিজয়া দশমী। শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন। মাকে আজ বিদায় জানানোর পালা। অশ্রু ঝরানোর পালা। এদিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পাঁচদিনের শারদীয় দুর্গোৎসব। বৃহস্পতিবার ১৪ অক্টোবর সকালে কল্পারম্ভ ও বিহিতপূজার মাধ্যমে শুরু হয় মহানবমীর আনুষ্ঠানিকতা। পূজা শেষে ভক্তরা দেবীর চরণে অঞ্জলি নিবেদন করেন। সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয় মহানবমী ও বিহিতপূজা। এতে অংশ নিতে পূজামণ্ডপে আসতে থাকেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরে বাড়তে থাকে ভিড়। শিশুসহ সব বয়সী মানুষকে পূজায় আসতে দেখা যায়।
সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে পূজা। মণ্ডপে মণ্ডপে করোনা থেকে মুক্তির জন্য করা হয় বিশেষ প্রার্থনা।
গত বছর করোনার কারণে বাসা থেকে বের হতে পারিনি অনেকেই। তাই পূজা দেখতে পারিনি অনেকেই, দুর্গা মায়ের আশীর্বাদও নিতে পারিনি অনেকেই। এবার বাড়ির পরিবার পরিজন সঙ্গে নিয়ে পূজা দেখতে এসেছে অনেকেই। খুব ভাল লাগছে। মণ্ডপে পূজা দিতে পেরে অনেক প্রশান্তি লাগছে অনেকের মনে। দর্শনার্থীরা অনেকগুলো মন্ডপ ঘুরে দুর্গা মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে এসেছেন বলে জানান।
সনাতন ধর্মমতে, নবমীর পুণ্য তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে বিশ্বে শুভ শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। নবমী তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট সর্বমোট ৪৮ মিনিটে করা হয় সন্ধিপূজা। মূলত দেবী চামু-ার পূজা করা হয় এসময়। এ সময়েই দেবী দুর্গার হাতে বধ হয়েছিল মহিষাসুর, আর রাম বধ করেছিলেন রাবণকে। এবছর দেবী এসেছিলেন ঘোড়ায় চড়ে এবং আজ শুক্রবার দশমীর দিন বিদায় নেবেন দোলায় বসে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দেয়া তথ্যমতে, এ বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে হয় দুর্গাপূজা। গত বছরের চেয়ে এবার পূজার সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৯০৫টি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা করতে হবে। এবছর বিজয় দশমী শুক্রবার হওয়ায় সকাল ১০টার মধ্যে প্রতিমা বির্সজনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিসর্জনকালে শব্দযন্ত্রের ব্যবহার সীমিত রাখা এবং উচ্চস্বরে শব্দযন্ত্র ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক সকল ধর্মীয় রীতি-নীতি, পূজা-অর্চনা, মাঙ্গলিক কার্যাদি ও প্রতিমা বিসর্জন দিতে হবে।