আনোয়ারা প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসীম কুমার দেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে চেয়ারম্যানকে ফাঁসানোর চেষ্টায় কয়েকজন যুবক ‘মানববন্ধন’ করে এবার এক নারীকে দিয়ে মিথ্যা বক্তব্য প্রদানের অভিযোগ উঠেছে।
গত ২২ জানুয়ারি উপজেলার ৭ নং সদর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড সর্দার পাড়াস্থ শ্রী শ্রী লোকনাথ মন্দির ও স্বামী জ্যোতিশ্বরানন্দ গীতা বিদ্যা নিকেতন ভাংচুর এর মিথ্যা অভিযোগ এনে চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করে কয়েকজন যুবক । ঠিক তার কয়েকদিন পর ফেসবুকে ক্ষমা চায় বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দান কারী রুবেল জলদাশ।
এবার গত ৯ নভেম্বর চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে মানববন্ধন করে একদল যুবক । যেখানে নন্দিনী চক্রবর্ত্তী এক নারীকে দিয়ে মিথ্যা বক্তব্য প্রদানের অভিযোগ উঠেছে।
এবার সেই নারী মুখ খুললো আসল ঘটনা বিষয়ে ।
অনুসন্ধানে জানা যায় , আনোয়ারা সদর ইউনিয়নের নন্দিনী চক্রবর্ত্তী একই ইউনিয়নের মৃত শম্ভু দে এর কাছ থেকে ২০১৫ সালে ১১০০ শতক (পাঁচ গন্ডা) জায়গা খরিদ করে বসবাস করে আসছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে শম্ভু দে’র ছেলে মিন্টু দে (মনা) খরিদকৃত জায়গায় জায়গা পাবে বলে জায়গা ছেড়ে দিতে হুমকি দমকি দিয়ে আসছে। এটাসহ আরো বিভিন্ন বিষয়কে সামনে নিয়ে গত (৯ নভেম্বর) মঙ্গলবার রুবেল জলদাশ, রাজীব, পঙ্কজ সহ কয়েকজন এসে বলল আনোয়ারা সদরে আমরা একটা মানববন্ধন করব এখানে আপনি চেয়ারম্যান ও মিন্টুর ব্যাপারে বলেন এবং ইউএনও বরাবর একটা অভিযোগ দিলে মিন্টু আর আপনার জায়গা দখলে নিতে পারবে না। তাই আমি মানববন্ধনে গিয়েছি। বললেন সেদিন মানববন্ধনে বক্তব্য রাখা সেই নন্দিনী চক্রবর্তী।
চেয়ারম্যানের মন্দির ভাংচুর বিষয়ে জানতে চাইলে নন্দিনী বলেন, আমি কখনো চেয়ারম্যান কে মন্দির ভাংচুর করতে দেখিনি। এটা আমার জানার বিষয়ও নই। মানববন্ধন আয়োজন করছে রুবেল জলদাস, পঙ্কজ, জোটন, রানা ও রাজীব সহ কয়েকজনে। এদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের কি সমস্যা তা আমি জানি না। ওরা বলছে ওখানে সাংবাদিকরা আসবে আমার জায়গার ব্যাপারে বলতে।চেয়ারম্যানের সাথে আমার কোন বিরোধ নাই। আমি শুধু আমার জায়গা ফেরত পাওয়ার আশায় সেখানে গিয়েছিলাম।
এদিকে মানববন্ধনে অভিযোগ আনা ভূমিদস্যু, ওয়ারিশ সনদ বাণিজ্য ও মন্দিরে ভাংচুরের বিষয়ে একটিও সত্যতা নেই বলে জানিয়েছেন আনোয়ারা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অসীম কুমার দেব।
ইউপি চেয়ারম্যান অসীম কুমার দেব বলেন, । মন্দিরের যে বিষয়টি সেটা হলো একটি সড়ক প্রশস্তকরণের সময় এরা মূর্তি এনে রাস্তার জায়গায় বসিয়ে দেয়। তারপরেও এদেরকে আমি বলি রাস্তার কাছে বাধা সৃষ্টি না করার জন্য এবং পাশে আমি লোকনাথ বাবার জন্য একটি মন্দির করে দিব। আর ওয়ারিশ সনদ নিয়ে ওরা যে কথা গুলো বলছে তার কোন সঠিক প্রমাণ তারা উপস্থাপন করেনি। এইছাড়া ভূমিদস্যু নিয়ে যে কথা বলছে কে কার থেকে জায়গা নিয়েছে এটা তো আমার বিষয় নই। ওরা দুই পক্ষ আমার কাছে বিচার নিয়ে এসেছিল। মিন্টু বলে এই বিষয়ে আমি আদালতে মামলা করব। তখন আমি নন্দিনীকে বলছি ওরাতো আদালতে যাবে বলছে, আদালতে গেলেতো এই বিচার করার ক্ষমতা আমার নেই।
মন্দির ভাঙ্গা নিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড চকিদার রুবেল সর্দার জানান, যে জায়গা মন্দিরের দাবি করছে সেই জায়গাটা অন্যজনের । এখানে আগে সন্ধ্যা সর্দার নামে এক আদবয়সী মহিলা ঝুপড়ি ঘরে মুড়ি মুড়কি বিক্রি করতো। ওই মহিলা মারা যাওয়ার পর ওই ঘর খালি ছিলো।
এতদিন পর যখন সদর চেয়ারম্যান এই রাস্তাটি করার উদ্যোগ নিয়েছে। তখনই কিছু যুবক মিলে মন্দির ভাঙ্গার নাটক বানান। রুবেল দাস ও তার পরিবার দেশী ও বিদেশী মদ ব্যবসার সাথে জড়িত। অবৈধ ভাবে মদ বিক্রির দায়ে রুবেল দাশের এর বাবা কিছুদিন আগে থানায় আটক ও হয়েছিলো।
মানববন্ধন বিষয়ে জানতে চাইলে রুবেল জলদাস বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ । আমি এখন কোন কথা বলতে পারবোনা । যা বলার মানববন্ধনে বলেছি ।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে তথাকথিত অভিযোগ এর কোন সত্যতা নেই। এই ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ওসিসহ সরেজমিনে গিয়েছে। এটা আসলে সামনে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অসীমের কয়েকজন বিরোধী লোকজন এসব নাটক সাজিয়েছে। এসব ঘটনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে জানান তিনি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জুবায়ের আহমেদ জানান, এসব বিষয়ে কয়েকজনেরর একটি অভিযোগ পেয়েছি, ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা মন্দির এর বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি । তবে যারা অভিযোগ করেছে তারা এসব অভিযোগের বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন উপযুক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারে নি।