বিশেষ প্রতিনিধি: আজ রবিবার (১ মে) মহান মে দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য—শ্রমিক-মালিক একতা, উন্নয়নের নিশ্চয়তা। দিবসটি পালনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
মে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের নেতৃত্বে শ্রম মন্ত্রণালয় ও এর অধীন অধিদপ্তর, দপ্তর, সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি ছিলেন শ্রমজীবী মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। স্বাধীনতার পর মে দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় এবং জাতির পিতা মে দিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে মজুরি কমিশন গঠন করেন এবং তিনি শ্রমিকদের জন্যও নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করেন। ১৯৭২ সালে জাতির পিতার উদ্যোগ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তজার্তিক শ্রম সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে এবং আইএলও-র ৬টি কোর কনভেনশনসহ ২৯টি কনভেনশন অনুসমর্থন করে। এটি একটি বিরল ঘটনা এবং শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের অধিকার রক্ষায় এক অনন্য স্বীকৃতি।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে। এই তহবিল থেকে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক যে কোন খাতে নিয়োজিত কোনো শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে অথবা মৃত্যুবরণ করলে, জরুরি চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ ও দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য এবং শ্রমিকদের সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্যেও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। আমরা রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করেছি এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। সব সেক্টরে শ্রমিকদের বেতন ভাতা বাড়ানো হয়েছে।
এ উপলক্ষে ৮ মে সকাল ১০টায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
দিবসটি উপলক্ষে স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। সড়কদ্বীপ সজ্জিতকরণ, টিভি টকশো, টিভি স্ক্রল, টিভি ডকুমেন্টারি, সচেতনতামূলক ভিডিও প্রস্তুতকরণ, মোবাইলে খুদে বার্তা প্রেরণ, জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। এছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন ও হেলথ ক্যাম্প আয়োজনসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
মহান মে দিবস শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের ইতিহাসে অনন্য দিন। সারা বিশ্বে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। বাংলাদেশে এই দিনে সরকারি ছুটি।
শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকরা আত্মাহুতি দিয়ে শ্রমিক অধিকার আদায়ে সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে মহান মে দিবসকে শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তিনি এই দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় স্বাধীনতা লাভের পরের বছরই জাতির পিতার ঐকান্তিক ইচ্ছায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সদস্য পদ লাভ করে।